ড. জাহিদ হোসেন বললেন, বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আর্থিক খাতে সংস্কার
আমিরুল ইসলাম : ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আর্থিক খাতে সংস্কার করা।
তিনি বলেন, বাজেটে ঘাটতি বরাবরই হয়ে আসছে, গত দশবছর ধরেও হয়েছে সেখানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো অভ্যন্তরীণ সূচকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেখানে সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ অনেক বাড়ানো হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো প্রয়োজন ছিলো। গত ৩-৪ বছর ধরে আমরা সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছি। ব্যাংক ঋণ ফেরত দিয়েছি যার ফলে আমাদের নেট জিডিপি অনুপাত খুব একটা বাড়েনি কিন্তু সুদের বোঝা বাজেটের ওপর অনেক বেড়ে গেছে। এখন যে পরিস্থিতিতে আমরা সঞ্চয়পত্র থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটা নিলাম সেখানে এখটা উভয় সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুই বছর আগে এমন সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যা ছিলো না কারণ ব্যাংকে তখন তারল্য বেশি ছিলো। এখন ব্যাংকের তারল্য নিয়ে টানাটানি আছে। এখন সরকার ব্যাংক থেকে মোটাদাগে ঋণ নেয়া শুরু করে তাহলে ব্যক্তিখাতে আরো বেশি তারল্য সংকট দেখা দেবে। এতে সংকটটা আরো বাড়বে। এমনিতেই ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবাহ খুবই কমে গেছে। ১২ শতাংশে নেমে এসেছে গত এপ্রিলে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবাহটা যাতে না কমে তার জন্য ব্যাংকের তারল্য বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাংকের তারল্য সংকটের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছেÑ ১. খেলাপিঋণ ২. ডিপোজিট গ্রোথ দুর্বল ৩. বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে সেটার বিনিময়ে টাকা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধিটা বন্ধ করা এবং বর্তমানে ১ লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকার মতো স্বীকৃত খেলাপিঋন সেটা আদায়ের জন্য যে সমস্ত কাজগুলো করা দরকার, ব্যাংকিং খাতে যে সংস্কার করা দরকার সেটার কিছু স্বীকৃতি আছে বাজেট বক্তৃতায়। ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনা আছে। এর বাইরে শুধু প্রতিশ্রুতি আছে। একটা ব্যাংকিং কমিশন আমরা খুলবো, সবার সাথে আলোচনা করবো, ব্যাংক কারাপসি আইন, অর্থঋণ আদালত আইন এগুলোর প্রতি নজর দেয়া হবে কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই, কবে কি করা হবে? আমার মনে হয় সঞ্চয়পত্রের যে টার্গেট আছে সেটা বরাবরের মতো ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে কোনো পরিবর্তন আসছে না। সঞ্চয়পত্রের টার্গেট পূরণ হয়ে গেলে ব্যাংকঋণের প্রয়োজনটা একটু কম হবে তারপরও সরকারকে প্রচুর ব্যাংকঋণ নিতে হবে। বাজেটের উদ্দেশ্য হলো সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা এবং দারিদ্রতা ও বৈষম্য কমানো। কাজেই ব্যাংকিং সেক্টরের চ্যালেঞ্জটাকে অ্যাড্রেস করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা চ্যালেঞ্জ হবে, যদিও টার্গেটটা অর্জনযোগ্য। এটা অর্জন করতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনটাকে সংস্কার করার কারণে কতোটা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা যাবে, এটা অনিশ্চিত। এটাকে সঠিকভাবে বলা খুব মুশকিল। ২০১২ সালের ভ্যাট আইনে একটা রেট ছিলো এখন সেখানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতিগত তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য করদাতার সংখ্যা বাড়ানো ব্যতীত আর কোনো উপায় নেই। করদাতা ২০ লাখ থেকে ১ কোটিতে উন্নীত করার কথা বলা হচ্ছে। এটা করতে হলে কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে। কর প্রশাসনের বিস্তৃতি সারাদেশে বাড়াতে হবে। বলা হচ্ছে উপজেলা লেভেলে এনবিআরের অফিস থাকবে। হাটবাজারে গিয়ে জরিপ করে কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হবে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এগুলোতে ফলাফল পেতে সময়ের প্রয়োজন। বর্তমান এনবিআরের যে দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে তার ভিত্তিতে করদাতা ১ কোটিতে উন্নীত তথা ৫০ লক্ষ করা যাবে কিনা সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। আর একটা জায়গা হচ্ছে প্রশাসনকে আধুনিকায়ন, বিশেষ করে অটোমেশন পদ্ধতি বাস্তবায়নের গতি বাড়তে হবে। কাজেই প্রশাসনের কাজের দক্ষতা ও করের আওতা বাড়ানো ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কীভাবে? আমার জানা নেই। উন্নয়ন ব্যায়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে বাস্তবায়ন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয়টা আছে সেটা জিডিপির অনুপাতে কম, অন্যান্য দেশের তুলনায়ও কম।