দেশে ধানকাটা মেশিনের ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি
মতিনুজ্জামান মিটু : কৃষি যন্ত্রায়নে দেশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল বাজার। শুধুমাত্র ধানকাটা ও মাড়াইয়ের জন্যই লাগবে ১৫ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মেশিন। কৃষি শ্রমিক সংকট এবং উৎপাদন খরচ কমাতে যন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেয়ায় দেশে যন্ত্রপাতির এই লোভনীয় বাজার সমম্প্রসারণ হয়েছে। এই বাজারের মেশিন বিক্রির জন্য বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। দেশীয়ভাবে এই যন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির সক্ষমতা না থাকায় বিদেশি কোম্পানিগুলোই বাজার দখল করছে। কৃষকরাও কিনছেন তাদের যন্ত্র।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘খামার যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প-২য় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ এর প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ শেখ মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, দেশের শতভাগ জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য লাগবে মাঝারি সাইজের (৫০, ৬০, ৭০ ও ৮০ অশ্বশক্তি বা হর্সপাওয়ার) ন্যূনতম এক লাখ মেশিন। বর্তমানে দেশে জাপান ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের ধানকাটার মেশিন বা কম্বাইন হারভেস্টার বিক্রি হচ্ছে। সেবাদানকারীরা এসব মেশিন কিনে ন্যূনতম অর্থে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে লাভবান হচ্ছে। এই কম্বাইন হারভেস্টার প্রতি ঘণ্টায় এক একর হারে দিনের ৮ ঘণ্টায় ৮ একর জমির ধান কেটে থাকে। জাপানী কোম্পানির এ ধরনের একটি মেশিন ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ এবং চীনা মেশিন ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মাঠে প্রায় ২০০০টি কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকের ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানের শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় ২০ হাজার কম্বাইন হারভেস্টার দরকার। প্রতি ব্লকে ১টি করে প্রায় ১৫ হাজার কম্বাইন হাভেস্টার বর্তমানের চাহিদা মেটাতে পারে।
বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রায়ণে সৃষ্ট বাজারে মেশিন বিক্রির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে নানা কৌশলে কৃষক, কৃষকদের সেবাদানকারী ও সরকারের বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কর্মকর্তা, কৃষি গবেষক এবং সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের রুপসী বাংলা গ্রান্ড বল রুমে জাপানের ইয়ানমার অ্যাগ্রোবিজনেস কোম্পানি লিমিটেডের ‘ইয়ানমার এগ্রো-টেক’ (ইয়ানমার কৃষি প্রযুক্তি) উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
এই মেশিন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে নতুন। অধিকাংশ কৃষকেরই এসংক্রান্ত কোনো ধারণা নেই। এবিষয়ে তারা কৃষি কর্মকর্তাদের ওপরই নির্ভরশীল। তাই এই মেশিন ব্যবহারের লাভ লোকসান এবং ভাল মন্দ সংশ্লিষ্টদের ওপরই বর্তাচ্ছে। তাদের প্রচারণায় ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এই মেশিন কিনতেও শুরু করেছেন। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান