চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে লাভবান হবে দেশের পোশাক শিল্প
স্বপ্না চক্রবর্তী : যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গত ১৩ মে চীনের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। যা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে দেশটিতে পোশাক ও পাদুকা শিল্পপণ্যের রপ্তানিতে। অতিরিক্ত এই শুল্ক চীনের জন্য শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ এই শুল্ক কার্যকর করা হলেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এথেকে সাময়িকভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, চীনের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত এই ট্যারিফ আদায়ের কারণে দেশটিতে চীনা তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাবে। এতে করে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার শক্তিশালী হবে। তবে স্বল্প মেয়াদে এই সুবিধা অব্যাহত থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অস্থিরতার শিকার হতে পারে বাংলাদেশও।
এ ব্যাপারে পোশাকশিল্প মালিকদের সভাপতি রুবানা হক বলেন, ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট পোশাক আমদানির প্রায় ৩৩ শতাংশ সরবরাহ করেছে চীন। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাকপণ্য রপ্তানি কমে যাবে। ইতিমধ্যে ২০১৩-১৮-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ১০.৩৯ শতাংশ কমেছে। যার আর্থিক মূল্য ৩.১৭ মিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সুতা রপ্তানি একই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে চীনের ফোকাস পোশাকের তুলনায় উচ্চমানের যুক্ত মধ্যবর্তী পণ্য। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ছেই।
রুবানা হক বলেন, এদিকে মার্কিন বাজারে পোশাকের চাহিদা বাড়ছে, কারণ তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারী-এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৫.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই পরিমাণ ছিলো ৩.০২ শতাংশ। মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের অতিরিক্ত চাহিদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানির নেতিবাচক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই বাজারটা যেহেতু এতোদিন চীনের দখলে ছিলো সেহেতু চীনা পণ্যের সঙ্গে আমাদের পণ্যের গুণগত সমতা তৈরি করাটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। যদি এটি সম্ভব হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার।
একই কথা বলেন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা পেতে পারে। কিন্তু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা অন্যরাও প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবে। ফলে একের পর এক প্রতিরক্ষণ দেয়াল তৈরি হবে। এর সঙ্গে আরো নতুন নতুন দেশ যুক্ত হতে পারে। ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে যাবে। চূড়ান্তভাবে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাতে আমাদের মতো দেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এসব দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের তুলনায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য খুবই ছোট। তবে এর ফলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য সুবিধা পেতে পারে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান