পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরাই প্রথম আক্রমণ করে, জানালেন স্ত্রী মিন্নি
সুজন কৈরী ও বীরেন্দ্র কিশোর (বরগুনা) : বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বরগুনার মাইঠায় নিজবাড়িতে বসে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিওতে যাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে মূলত তারাই প্রথমে রিফাত ও আমার পথ আটকে দিয়েছিল। সেইসঙ্গে তিন-চারজন রিফাত শরীফকে মারতে শুরু করেছিল। নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করলে তারা পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। এরপর আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও রিফাত শরীফকে বাঁচাতে পারিনি।
‘আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি।’ এছাড়া রিফাতকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিফাতের বাবা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মিন্নি বলেন, সকাল ৯টার দিকে স্বামী রিফাত শরীফের সঙ্গে বরগুনা কলেজে যাই। সাড়ে ১০টার দিকে আমরা কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেই। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে পৌঁছালে বেশ কয়েকজন যুবক আমাদের গতিরোধ করে রিফাতকে মারধর শুরু করে। রিফাতকে একসময় রিশান ফারজী জাপটে ধরলে নয়ন ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে । আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারিনি। রিফাতকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে রিফাতের মৃত্যু হয়।
রিফাতকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এসময় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। রিফাত হত্যাকা-ের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে জেলা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও অভিযান চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রিফাতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে লাশ নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরগুনার নিজ বাড়িতে পৌঁছায় একটি অ্যাম্বুলেন্স।
জানাজায় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সা. সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবীর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মো. দেলোয়ার হোসেনসহ এলাকাবাসী অংশ নেন। জানাজায় উপস্থিত সকলের কাছে রিফাতের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রর্থনা করেন রিফাতের বাবা মো. দুলাল শরীফ এবং চাচা আজিজ শরীফ।
রিফাতের জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। এ সময় তারা নিহত রিফাতের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান এবং তাদের যে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এদিকে রিফাত হত্যকা-ের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো- মামলার চার ও নয় নম্বর আসামি চন্দন ও হাসান। এর আগে ঘটনার দিন রাতে নিহতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা মাঠে কাজ করছে। বলতে পারেন সব পুলিশ মাঠে। যেকোনো মূল্যে এই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। ঘটনার সঙে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
বৃহস্পতিবার রিফাতকে হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধবার একটি নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বরগুনায়। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তাহলে এরকম ঘটনা ঘটবে না।