জি-২০ সম্মেলনের কেন্দ্রে এবার বাণিজ্য বিরোধ ও বিভাজিত বিশ্ব রাজনীতি
নূর মাজিদ : গতকাল শুক্রবার জাপানি সম্রাটের প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পর্দা উঠেছে, বিশ্বের প্রভাবশালী ২০ দেশের জোট জি-২০র রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের বৈঠকের। যাতে অংশ নিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রা¤প, তবে নির্ধারিত সময়ের চাইতে একঘণ্টা দেরীতে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান তিনি। সম্মেলনস্থলে সবচেয়ে দেরীতে পৌঁছানো রাষ্ট্রনেতা ছিলেন তিনি। এসময় তাকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। এরপর গ্রুপ ছবির আনুষ্ঠানিকতা সেরে জি-২০ নেতারা তাদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। সূত্র : সিএনএন।
নৈশভোজের গ্রুপ ছবি তোলার আগে ট্রা¤পকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রোর সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে গ্রুপ ছবির সময়েই চলতি জি-২০ সম্মেলনে বিভাজিত বৈশ্বিক রাজনীতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক পরিষ্কার চিত্র ফুটে ওঠে। ছবি তোলার সময় ট্রা¤েপর পেছনে ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর বাম পাশে ছিলেন জাপানের শিনজো অ্যাবে। অন্যদিকে মাঝখানে স্ত্রীকে রেখে ট্রা¤েপর ডান পাশে দাঁড়ান তুর্কি রাষ্ট্রপতি রিসেপ তায়েব এরদোগান। শি জিনপিং এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র পুতিন দাঁড়িয়েছেন পাশাপাশি। এটা ক্রমবর্ধমান রুশ-চীন কৌশলগত মিত্রতার চিত্রকেই তুলে ধরে।
এবারের জি-২০ সম্মেলন নানা কারণেই বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যার অন্যতম প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ। আজ শনিবার এই সম্মেলনের শেষ দিনে বৈঠকে বসবেন শি-ট্রা¤প। যার দিকেই নজর বাকি বিশ্বের। কারণ বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং সংস্থাগুলো বলছে, জি-২০ বৈঠকে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মাঝে বাণিজ্য বিরোধ নিরসন না হলে, সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। কমবে উৎপাদন, বিপর্যস্ত হবে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা। এই প্রেক্ষিতেই তারা ট্রা¤প-শি বৈঠকে বিরোধ নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে ট্রা¤প গতকাল বলেন, ‘আমি শি’র সঙ্গে বৈঠক নিয়ে দারুণ উত্তেজনা অনুভব করছি। এটি একটি উত্তেজনাকর দিন হবে বলেই আমি মনে করি। এর ফলাফল কি হবে তা সকলেই দেখতে পারবেন।’
এর মধ্য দিয়ে ট্রা¤প আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা বোঝা মুশকিল হলেও, এখন পর্যন্ত তিনি বা তার প্রশাসন, বিরোধ নিরসনে চীনের অন্যতম প্রধান শর্ত শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন ইতিবাচক মন্তব্য করেন নি। বরং ট্রা¤প গতকালই নিশ্চিত করেন, পূর্বশর্ত হিসেবে শুল্ক প্রত্যাহারের কোন অঙ্গীকার তিনি করেন নি এবং করার কথাও ভাবছেন না। যার প্রেক্ষিতে শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জে উদ্যোগী হবেন, বলেই আশা করা হচ্ছে।
এদিন চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে বৈঠক করেছেন ট্রা¤প। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ। তার দাবী, দুই নেতার মাঝে নানা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। তবে সময় সংকটের কারণে তারা আলোচনায় ব্যক্তিগত অভিমত এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময় সংক্ষেপ করেন। তাদের মাঝে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক স¤পর্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকে মার্কিন নির্বাচনে রূশ স¤পৃক্ততা নিয়ে ট্রা¤প কৌতুক করলেও, তাতে বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হালকা হয়নি।
কারণ, ট্রা¤েপর সঙ্গে বৈঠকের পূর্বে পুতিন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা উদারতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে পড়েছে। এবং এর মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে। এসময় পুতিন বলেন, পশ্চিমা তথাকথিত উদারবাদ আজ বিশ্বের জনমানুষের প্রত্যাশা এবং আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা একথা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে, তারা আগের মতো চাইলেই কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারেনা।