আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • লিড ৪ • শেষ পাতা
নতুন ভ্যাট আইন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে কার্যকর হলো নতুন বাজেট
স্বপ্না চক্রবর্তী : ভ্যাট আইন বাস্তবায়নসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়েই গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হলো ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেট। ২০১২ সাল থেকে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনটির বাস্তবায়নে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও, আইনের যথেষ্ট সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে অবশেষে বাস্তবায়িত হলো।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি প্রথম বাজেট। গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মোট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। যদিও তিনি অসুস্থতার কারণে পুরো বাজেট উপস্থাপন করতে পারেননি। বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার বাজেটের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে এবারের বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের কৌশল দেখানো হয়েছে। করদাতার সংখ্যা ২০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীত করার কথাও বলা হয় বাজেটে। নতুন বাজেটের এডিপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যার পরিমান ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এছাড়া বাজেটে শিক্ষা খাতের সংস্কারসহ আর্থিক খাতের সংস্কার, শেয়ারবাজারে সুশাসন ও প্রণোদনা বিষয়েও সংস্কারমূলক দিক-নির্দেশনা রয়েছে।
২০২০ সালে পালিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হবে ২০২১ সালে। এ কারণেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি হবে সব দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি জাতির এই বড় দুটি অর্জন উপলক্ষ্যে সরকারের নানা পরিকল্পনা বা প্রতিশ্রæতিও রয়েছে নতুন বাজেটে।
তবে এই বাজেটে ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে করবহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৭১০ কোটি টাকা। নতুন বছর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ ঋণ নেওয়া হবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নেওয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা।
বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা ১৪ শ্রেণির জনগোষ্ঠীর পরিধি। এবার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রম, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম, লিভার সিরোসিস, ক্যানসার, কিডনি, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী, গ্রামীণ দুস্থ মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা তহবিল ও ভিজিডি কার্যক্রম বেড়েছে।সম্পাদনা:সমর চক্রবর্তী