ছেলেডা ভাতের থালা রাইখে গেলো, আজ চারদিন সে ভাত খায় ন, বললেন শাহীনের মা
মোহাম্মদ রকিব : সকাল সাতটার মতো বাজে, শাহীন আমারে কইলো আম্মু ভাত দাও। কইলাম, তরকারি হয় নাই, একটু দেরি কর, ভাত দিচ্ছি। রাতে খাওয়ার পর কলপাড়ে থালা-চামুচ রাইখে এয়েছিলাম। ছেলেডা নিজেই কলপাড়ে গিয়ে একটা থালা আর চামুচ মাজিছে। মাজি এনে বলে, আম্মু ভাতের হাড়ি সিদা করে দাও, ভাত নেবো। সারাবাংলা
ছেলেডারে কইলাম, তরকারি তো নাই, কী দিয়ে খাবা? আগের দিনের তরকারিও তার পছন্দ আছিলো না। পরে নিজেই শুকনা মরিচ কাঠিতে গাঁইথা নিলো। সেই মরিচ চুলার আগুনে পোড়াইলো। তারপর চুলার পরে থাকা ভাতের হাড়ি থেকে নিজেই ভাত নিলো, পোড়া মরিচ আর হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভাত মাখাইলো। কিন্তু সেই ভাত এক লোকমা, কি দুই লোকমা মুখে দিছে ছেলেডা আমার। আর খাইতে পারে নাই, আর আইজ চারদিন ধইর্যা সে ভাত খায় না, কোনোদিন খেতে পারবে কি না জানি না। আপনাদের কই- ভ্যান, মোবাইল কিচ্ছু চাই না, কেবল আমার ছেলেডারে চাই, আল্লা যেন ওরে আমার বুকে ফেরাইয়া দেয়- বলেই কাঁদতে থাকেন শাহীনের মা খাদিজা।
গত ২৮ জুন বিকেলে যাত্রীবেশে কয়েকজন ছিনতাইকারী সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ায় যাওয়ার কথা বলে কিশোর শাহীনের ভ্যানে ওঠে। শাহীন তাদের নিয়ে ধানদিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর ধানদিয়া গ্রামে পৌঁছালে এক পাটক্ষেতের পাশে দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে জ্ঞান ফিরে শাহীন কান্নাকাটি শুরু করলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়। এরপর পুলিশের সহায়তায় শাহীনকে খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
টানা ৩০ ঘণ্টা খুলনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় শনিবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শাহীনের লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়েছে। আগের থেকে সে ভালো আছে। তবে তাকে আইসিইউতে আরও কয়েকদিন রাখা হবে।’