আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
জ্বালানি খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকির পরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিস্ময়
শাহীন চৌধুরী : সম্প্রতি পাস হওয়া বাজেটে জ্বালানি খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়ার পরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করে এই খাতের দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব ছিল।
প্রসঙ্গত, সংসদে পাস হওয়া বাজটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ১৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্ত‚কি ও নগদ ঋণ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুতে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ আর জ্বালানিখাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্ত‚কি। তবে বিদ্যুৎখাতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর জন্য ভর্ত‚কি হিসাবে রাখা হয়নি। নগদ ঋণ হিসেবে রাখা হয়েছে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, মিটারবিহীন আবাসিক ভোক্তার ক্ষেত্রে দুই বার্নার চুলায় মাসিক ৮৮ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার দেখিয়ে ৮৫০ টাকা বিল নেয়া হয়। সাধারণত ভোক্তা এ গ্যাসের অর্ধেকও ব্যবহার করেন না। আবার গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকার কোনো কোনো এলাকার ভোক্তা এ গ্যাসের ২০ শতাংশও পান না। অথচ হিসাবে মাসে ভোক্তাপ্রতি ৮৮ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার দেখানো হয়। ফলে বছরে ব্যবহ‚ত মোট গ্যাসের প্রায় ১৬ শতাংশ আবাসিকে খরচ দেখানো হয়। আবার গ্যাসস্বল্পতার কারণে চাপ কম থাকে। ফলে গ্যাস ব্যবহার কম হয়। অথচ মিটারে বেশি দেখায়। ফলে ভোক্তাকে কম গ্যাস ব্যবহার করে বিল বেশি দিতে হয়। তাতে প্রকৃত ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ অপেক্ষা হিসাবে বেশি পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার দেখানো যায়। ফলে বাড়তি বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি/আত্মসাৎ হয়।
তিনি বলেন, এই চুরির সিংহভাগই হয় তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিতে। দীর্ঘদিন ধরে এ চুরির প্রতিকার ও প্রতিরোধ দাবি করে আসছেন ভোক্তারা। প্রতিটি গণশুনানিতে ভোক্তারা এ দাবি পেশ করেন। ২০১৫ সালে গ্যাসের ম‚ল্যবৃদ্ধির আদেশে বিইআরসি আবাসিকে প্রি-পেইড এবং শিল্প ও বাণিজ্যে ইভিসি মিটার লাগানোর আদেশ দেয়। সে আদেশ প্রতিপালিত হয়নি, হলে গ্যাস চুরি/আত্মসাৎ কম হতো এবং গ্যাসের দাম বাড়াতে হতো না।
এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম তামিম বলেন, জ্বালানি খাতের চুরি ও লুটপাট বন্ধ করা হলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতো না। তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে সজাগ হওয়ার আহবান জানিয়ে এলএনজি আমদানি কমিয়ে নিজস্ব গ্যাস উদ্যোগের অনসন্ধান এবং উত্তোলনের তাগিদ দেন।
সূত্রমতে, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির জন্যই জ্বালানি খাতে বাজেটে এই ভর্ত‚কি দেয়া হয়েছে। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছর গ্যাসে ভর্ত‚কি ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে চলতি অর্থ বছরে তা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। গ্যাসে বরাবরই ভর্ত‚কি কম ছিল। এবারই প্রথম বিদ্যুৎখাতকে ছাড়িয়ে গ্যাসে ভর্ত‚কি বেশী দেয়া হয়। গ্যাসে এরআগে ২০১৭-১৮ অর্থবছর ভর্ত‚কি ছিল ৩ হাজার ৬১ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর মাত্র ৩০০ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ১৮০ কোটি, ২০১৪-১৫ তে ১৭০ কোটি, ২০১৩-১৪তে ১৬০ কোটি এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে গ্যাসে ভর্ত‚কি ছিল মাত্র ২ কোটি টাকা। সম্পাদনা : ইকবাল খান