আমিরুল ইসলাম : বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট। দৈনিক চাহিদা এখন ৩৫০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের চাহিদা যে হারে সে হারে বাড়েনি উৎপাদন। ফলে এলএনজি আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত তেরো মাসে এলএনজি আমদানির জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই তেরো মাসেই লোকসান হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই লোকসান ঠেকাতেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের আমদানিনির্ভরতা কমাতে এবং জনগণের উপর মূল্য বৃদ্ধির চাপ কমানোর জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থের বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং ভালো একটি বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে গ্যাস যতোটুকু রয়েছে সেটা ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনসোর গ্যাস যেগুলো। সম্ভাবনা আছে সমুদ্রের নিচে নতুন যে বাউন্ডারিগুলো তৈরি হয়েছে সেখানে। আমাদের সমুদ্রের নিচে যে গ্যাস আছে সেটা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য আমাদের দেশে যে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাপেক্সের যে প্রযুক্তি আছে সেটা দিয়ে হবে না। সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য উন্নত প্রয্ুিক্ত ব্যবহার করতে হবে। সেজন্য ভালো কোনো গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানিকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই গ্যাস উত্তোলনের জন্য বা অনুসন্ধানের জন্য অর্থের বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। নতুন কোম্পানিকে শুধু ডাকলেই চলে আসবে না। গ্যাস উত্তোলনের পর এই গ্যাস তারা কার কাছে বিক্রি করবে এবং কি দামে বিক্রি করবে তা নির্ধারিত করে বললে তাদের সবকিছু পছন্দ হলে তারপর তারা আসবে। আবার গ্যাস অনুসন্ধানের পর যে গ্যাস পাওয়া যাবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। তবে আমাদের সমুদ্র সীমায় গ্যাস রয়েছে এটা বলা যায় কারণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে মিয়ানমার ও ভারত ইতোমধ্যে গ্যাস উত্তোলন করে বিক্রি করছে। সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো বিক্রি করা যাবে। সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে সে গ্যাস জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্যও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। তাই আমাদের গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন এবং অর্থের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া আমাদের পুরানো যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে প্রচুর গ্যাসের অপচয় হয়, সে অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিভিন্ন দুর্নীতি রয়েছে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে। জ্বালানি খাতে সুশাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুশাসনের ব্যবস্থা করতে পারলে কমমূল্যেই জনগণকে গ্যাস দেয়া যাবে। বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানিনির্ভরতা কমানো যাবে।