আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ৯ চুক্তি ও স্মারক সই
ফাতেমা আহমেদ : চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় শেখ হাসিনা গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান লি খ্য ছিয়াং। তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গ্রেট হলের সামনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। এরপর সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। তোপধ্বনির পর সুসজ্জিত একটি বাদক দল দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে শোনায়। অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় বৈঠক। সূত্র : বিডিনিউজ, শীর্ষ নিউজ, বাংলানিউজ
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রায় আধা ঘণ্টা এ বৈঠক চলে। বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুদেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর আগে গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান কেকিয়াং। পরে তিয়েন আনমেন স্কয়ারে গ্রেট হলের সামনে সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানিয়ে তোপ ধ্বনি দেয়া হয়।
অভ্যর্থনা পর্ব শেষে দুই নেতার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়। অর্থনৈতিক, কারিগরি, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন।
বাংলাদেশ ও চীনের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব দলিলে সই করেন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি হয়।
ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি এবং প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন অ্যাগ্রিমেন্ট নামে আরেকটি চুক্তি সই হয়।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) প্রকল্পের আওতায় পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হয়।
বাংলাদেশে ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয় দুই দেশের মধ্যে।
ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রæপ প্রতিষ্ঠায় একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডি এই সমঝোতা স্মারকে সই করে।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ইয়ালুঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর হাইড্রোলজিক্যাল তথ্যবিনিময় ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্প বিনিময়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে চীনের পক্ষে সই করে তাদের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে সই করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আড়াই হাজার মেট্রিক টন চাল সহায়তা দিতে চীনের আন্তজার্তিক উন্নয়ন সহযোগিতা এজেন্সি এবং বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জ সই হয়।
চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর চীনে শেখ হাসিনার এটিই প্রথম সফর। বেইজিং সফরে তিনি থাকছেন দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাউসে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬ জুলাই বেলা ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং ওই দিন বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) পৌঁছাবেন। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান