১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণখেলাপিরা আসছে বিশেষ নজরদারিতে
রমজান আলী : খেলাপি ঋণ নিয়ে বিপাকে আছে পুরো ব্যাংক খাত। বেকায়দায় রয়েছে সরকারও। সর্বশেষ খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ রয়েছে এমন ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ নজরদারির মধ্যে রেখে ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। তা সেই ঋণখেলাপি অবস্থায় থাকুক আর নিয়মিতই থাকুক। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি থাকায় এমন একটি নির্দেশনা দেয়া বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে কবে নাগাদ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে, কোনো সূত্র থেকে তা নিশ্চিত করা যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পাঁচ শতাংশের ওপরে রয়েছে, তাদের চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে পর্ষদ সদস্যদের মতামত নেয়ার জন্য ওই সভায় তোলার কথা হচ্ছিল। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার ওপরের ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখার বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা ছিলো ওই সভায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ ছিলো এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকখাতের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এদিকে খেলাপি ঋণ পরিশোধে বিশেষ নীতিমালার সার্কুলার দুই দফা হাইকোর্টেও স্থগিতাদেশে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখার কথা থাকলেও গত সপ্তাহে মঙ্গলবার চেম্বার আদালত ওই স্থগিতাদেশের ওপর আজ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ৩০০ শীর্ষ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ঋণখেলাপির কাছে পাওনার পরিমাণ ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা এবং শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা।
সেই সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা বা কম পাওনা থাকাদের তালিকাও প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ তালিকায় দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ১৪ হাজার ৬১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। খেলাপি হয়েছে এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
সুত্রে জানাযায়, বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ কমিটি গঠন করে। খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে? কমানোর উপায় কী? এসব বিষয়ে সুপারিশসহ দ্রুততম সময়ে এ কমিটিকে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে দিতে বলা হয়। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাদ হোসাইনের নেতৃত্বে বিশেষ এ কমিটিতে অফ-সাইট সুপারভিশন, ব্যাংক পরিদর্শনে নিয়োজিত চার বিভাগ, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস এবং ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকরা রয়েছেন। কিন্তু বিশেষ কমিটি গঠনের তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। তিন সপ্তাহ পার হলেও একটি প্রাথমিক মিটিং করা ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেনি কমিটি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এটি কোন উপায়ে কমানো যায় তা নির্ণয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রতিবেদন জমা দিতে কতোদিন সময় লাগবে – জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, কমিটি কাজ করছে। সুপারিশ তৈরি করে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান