৬১ টাকায় গ্যাস কিনে দিচ্ছি ৯.৮ টাকায়, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
শাহীন চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন গ্যাসের দাম বাড়ানো জরুরি, সে বিষয়ে সরকারের যুক্তিগুলো তিনি তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, সরকার গত ৩০ জুন সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তার প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে আধাবেলা হরতাল করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিএনপি ও তাদের কয়েকটি শরিক দলও সেই হরতালে সমর্থন দেয়।
সাম্প্রতিক চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর প্রতিবাদে আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আগে ঠিক করতে হবে, তাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না।
তিনি বলেন, আমরা যদি দেশের উন্নতি করতে চাই, এনার্জি একটা বিষয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতোটুকু বেড়েছে? এখন জিডিপি ৮.১ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ এনার্জির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ আমদানি বাড়াতে পারলেও বাংলাদেশকে গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানির জন্য খরচও বেশি পড়ছে। কিন্তু সেখানে দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, এটা যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে আপনাদের কাছে দুটো পথ আছে। হয় আমরা এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলবো, তাতে উন্নতি হবে না। আর যদি সত্যিই অর্থনৈতিক উন্নতি চান, তো এটা তো মেনে নিতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পায়ন করতে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে, সার উৎপাদন করতে হলে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে, এলএনজি আমদানি করতেই হবে। এলএনজি আমদানি করতে আমার কতো টাকা খরচ হয়, সেই হিসাবটাতো আগে জানতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। সেটা দেয়া হচ্ছে ৯.৮০ টাকায়।
তিনি বলেন, ভারতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালীতে স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা, শিল্পে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, সিএনজি ৪৪ টাকা আর বাণিজ্যিকে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। আর বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালীতে ১২.৬০ টাকা, শিল্পে ১০.৭০ টাকা সিএনজি ৪৩ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২৩ টাকা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুষ্ঠানে আরও বলেন, গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তার ভাষায়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সেবার ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে’ ক্ষমতায় আসেন। সেই বিএনপি সরকারের সময় ভারতকে পাইপ লাইন দিয়ে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ না দেয়াও ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি থাকলে কী করতাম? পাইপ লাইনে তো গ্যাস নিতে দিতামই, আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম। বলতাম, আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। তখন যদি মিয়ানমার থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস আনতে পারতাম, আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলতো। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে। সেই গ্যাস এখন পাইপলাইনে করেই চীনে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কতোগুলি বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করে, বা সরকার যদি ভুল করে, তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়। এখন যে পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে সরকার প্রধান বলেন, সমস্ত ট্যাক্স মাফ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, আমি সেই ব্যবস্থাটা করেছি। তারপরও হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন। খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলাম তো, পরিবেশের জন্য ভালো, এজন্য তিনি আন্দোলনকারিদের ধন্যবাদ জানান। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান