রিকশা বন্ধে বেড়েছে ভোগান্তি, যানজট রয়েছে আগের মতোই
ইয়াছির আরাফাত : ঢাকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে রিকশা উঠিয়ে দেয়ায় বাসচালকরা খুশি হলেও অনেকটা আগের মতোই যানজট দেখা গেছে সড়কগুলোতে, পাশাপাশি গণপরিবহনের সংকটের নগরীতে বাসে উঠতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কর্মজীবী নারী ও স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের। সূত্র : বিডিনিউজ, আরটিভি অনলাইন ও পূর্বপশ্চিম অনলাইন
পর্যাপ্ত বিকল্প না রেখে রিকশা উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অনেকে। গাড়ির পাশাপাশি রিকশা চলাচলের জন্য রাস্তার পাশে ছোট লেইন করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন, তাই রিকশার লেইনের বিষয়ে ভাবছেন না তারা। রাজধানীর কুড়িল-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ রুটে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, যার প্রথম দিন ছিলো রোববার।
প্রগতি সরণি এবং এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে দেখা যায়, এসব সড়কে রিকশা চলাচল করছে না। তবে বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় মাঝেমধ্যে কয়েকটি রিকশা চলাচল করেছে। বেলা ১টায় প্রগতি সরণির কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে কোনো রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়নি। এ সময় কুড়িল চৌরাস্তা থেকে নদ্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে যানজট ছিলো। কুড়িল থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত পার হতে ২৫ মিনিট লেগে যায়। নতুন বাজার থেকে কুড়িল যাওয়ার পথে কোকাকোলা এলাকা থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত সড়কেও যানজট ছিলো একই রকম, যদিও সেখানে রিকশা দেখা যায়নি। ওই সড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অনেককে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুরুষরা উঠতে পারলেও নারীদের জন্য বাসে ওঠা ছিলো বেশ কষ্টকর।
নদ্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন বাজার যেতে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন কালাচাঁদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন উম্মে আতিয়া বলেন, বাস পান না বলে বেশিরভাগ সময় রিকশায় যাওয়া-আসা করতেন তিনি। আজ তা পারছেন না। নতুন বাজার থেকে সহজে বাসে ওঠা যায় না। আবার কলেজের ইউনিফর্ম দেখলে বাসও থামায় না। রিকশা তুলে দেয়ার বিরোধিতা করছি না, কিন্তু পর্যাপ্ত বাস থাকলে রিকশা না হলেও চলতো। কিন্তু এই সড়কে এখনও পর্যাপ্ত বাস চলাচল করে না।
প্রগতি সরণিতে রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় খুশি বাস চালকরা। এতে এই সড়কে যানজট কমবে বলে মনে করছেন মিরপুর-বাড্ডা রুটের আকিক পরিবহনের চালক মোহাম্মদ দয়াল। তিনি বলেন, রিকশার লাইগা ডানে বামে লইতেও পারি না। রিকশাওয়ালারা খুব ডিস্টার্ব করে। চিপায় চাপায় ঢুকাইয়া দেয়। অহন একটু সুবিধা হইল। আরামে গাড়ি চালান যাইব। তবে রিকশা বন্ধের কারণে জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাড্ডা আনন্দনগর এলাকার রিকশাচালক আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধান সড়ক ছাড়া এদিকে রিকশার যাত্রী খুব একটা পাওয়া যায় না। গলিতে যাত্রী কম থাকে। এই রোডে যাত্রী পাই বেশি, দূরের যাত্রীও আছে। রিশকা বন্ধ হইলে ঝামেলায় পরুম। ইনকাম কমলে চলুম ক্যাম্নে? এরমইধ্যে পোলারে আবার স্কুলে ভর্তি করাইছি।
রাজধানীর শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্তও রিকশা চলাচল বন্ধ ছিলো। বিকেল ৫টার দিকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী সড়কে গাড়ির অপেক্ষায় আছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রিকশা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বাসা থেকে কর্মস্থল সেগুনবাগিচায় নিয়মিত রিকশায় যেতেন তিনি। রিকশা বন্ধে দুর্ভোগ-খরচ দুটোই বেড়েছে তার। ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত বাস আছে বলেও দাবি করেন মেয়র খোকন। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই এলাকায় পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। এসব বাস স্বল্প দূরত্বেও যাত্রী বহন করছে। রিকশার জন্য আলাদা লেইন করে দেওয়া যায় কি না এমন প্রশ্নে মেয়র খোকন বলেন, আলাদা লেইন করার চিন্তা করছেন না তারা।
এদিকে, যানজট নিরসনে রাজধানীর বড় তিন সড়কে রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অননুমোদিত যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে আন্দোলনরত রিকশাচালক ও মালিকরা রাস্তা ছেড়ে গেছেন। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়ে চলে যান। রিকশাচালকদের দাবি মঙ্গলবারের মধ্যে এ বিষয়ে সুরাহা না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামবেন। এর আগে, সকাল ৭টা থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন রিকশাচালকরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন রিকশার মালিকরাও। রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, মান্ডাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার সড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ জনগণ। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান