ফসলের বাম্পার ফলনের সুফল পায় না কৃষকসহ নি¤œআয়ের মানুষ
মতিনুজ্জামান মিটু : কৃষকের ঘরে যখন ফসল ওঠে তখন বাজারে তার দাম থাকে না। দোষ হয় অতিরিক্ত উৎপাদনের। আবার কৃষকের ঘর ফসলশুণ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুহু করে বাড়তে থাকে বিভিন্ন ফসলের দাম। যেমনটি ঘটেছে এবারও। সপ্তাহ খানেকের মাথায় ২০/২২ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। আর ২৫ টাকার রসুনের দাম উঠেছে ১২০ টাকা। কৃষকসহ নি¤œআয়ের মানুষদের এই দামেই কিনে খেতে হচ্ছে। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও অনেক কৃতিত্বের দাবিদার সরকার এবিষয়ে কিছুই করতে পারছেনা। তাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
কৃষকসহ দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ এদের হাতে জিম্মি। কোনোভাবেই এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যাচ্ছেনা। সদ্য শেষ হয়ে যাওয়া মৌসুমে পেঁয়াজ-রসুন বেচতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। দেশের হিলি সীমান্তে পিঁয়াজের দাম নেমে হয়েছিল ৫ থেকে ৭ টাকা।
এদিকে কোরবানির ঈদ আসার এখনও এক মাসের বেশি বাকি। অথচ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভোক্তাদের অনেকে অভিন্ন সূরে বলছেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ আসার এক থেকে দুই মাস আগেই ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ এ সময় মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। এ জন্য সুযোগ বুঝে বেশি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে বর্তমানে কেজি প্রতি এলাচ ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা বেড়েছে। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ টাকা কেজি। যা গত মাসে বিক্রি হয়েছে ১৬০০ টাকা। মাসের ব্যবধানে কেজিতে লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। কেজি প্রতি আদা মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। বর্তমানে কেজিপ্রতি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। মাঝারি মানের প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা। সাদা গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। কালো গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। এদিকে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরের তালিকায়ও দেখা গেছে। সেখানে মাসের ব্যবধানে কেজিতে এলাচের দাম বৃদ্ধির চিত্র দেওয়া হয়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। লবঙ্গের দাম ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। মান ভেদে আদার দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দেশে রসুনের দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. আব্দুল ওয়াহেদ সরদার বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাম্পার ফলন করেও কৃষকের পেটের ভাত হচ্ছেনা। কৃষকসহ নি¤œ আয়ের মানুষের কোনোই কাজে আসছে না বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন। সম্প্রতি রোরোধান, পিয়াজ ও রসুনের পরিণতির দিকে তাকালে এই সত্য অনুভব করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। বিশেষায়িত ব্যবস্থার অভাবে কৃষক তার উৎপাদিত পিয়াজ ও রসুনসহ অন্যান্য মসলাসহ সবজি ও ফল সংরক্ষণ করতে পারছেন না। এব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ এবং মনিটরিংও নেই। জবাবদিহিতাও চোখে পড়ে না। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব