নূর মাজিদ : ২০০৮ সালের মন্দার আগে বিশ্ব অর্থনীতির মোট দেনার পরিমাণ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা। আবারো একই চক্রে পড়তে চলেছে বিশ্ব। তবে এবারের কারণ অনেকটাই স্বতন্ত্র। ঝুঁকির পরিমাণও বিপুল প্রায় ১০০ লাখ কোটি ডলার। সূত্র : দ্য নিউ স্টেটসম্যান, সিএনএন।
মূলত স¤পদের অতি-মূল্যায়নের কারণেই এই বিপুল ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান, জমি, ব্যবসার আর্থিকমূল্য কৃত্রিম অবস্থানে রয়েছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। অনেকক্ষেত্রেই স¤পদের অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে বর্তমান এবং সম্ভাব্য বাজার মূল্যের বিষয়ও রয়েছে। ইতোপূর্বে ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন আশংকায় প্রকাশ করেছিলেন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেষক দল। ক্যামব্রিজ, র্যাডবাড ইউনিভার্সিটি, ওপেন ইউনিভার্সিটি, ম্যাকাও ইউনিভার্সিটি একযোগে এই গবেষণা করে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিশ্বের বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানিকে এখন খুবই মূল্যবান স¤পদ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অথচ ২০৩৫ সালেই এই ধরনের জ্বালানি ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি খনিজ তেল ও গ্যাসের চাহিদা কমাবে। ফলে এগুলোর মজুদের সার্বিক মূল্যপতনও হবে বিপুল গতিতে। শুধুমাত্র জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষেত্রেই এই অতি মূল্যায়নের কারণে ৪ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। গত বিশ্ব মন্দা মাত্র ২৫ হাজার কোটি ডলারের ঘাটতির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিলো। সেই তুলনায় শুধুমাত্র একটি খাতেই এত বিপুল দরপতন অন্যান্য খাতেও যে গভীর প্রভাব ফেলবে সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। চলতি শতকের শেষ নাগাদ এই অতি-মূল্যায়িত স¤পদ সার্বিকভাবে ১০০ লাখ কোটি ডলারের প্রাথমিক সংকটের সূচনা করবে। তাহলে ওই অর্থনৈতিক মন্দার আকার কত বিপুল হবে, সেটা অনেকেরই ধারণার বাইরে।
এই অবস্থা মোকাবেলায় অনেক দেশেরই সরকার ও সংস্থা এখন আর্থিক খাতের সংস্কার ও পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছে। এইক্ষেত্রে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য। চলতি সপ্তাহেই ব্রিটিশ সরকার নতুন গ্রিন ফাইন্যান্স স্ট্রাটেজি বা কৌশল প্রণয়ন করেছে। যার আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিকে কার্বন দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মধ্য-বাম লেবার দল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন স¤পর্কিত প্রতিবেদন পরীক্ষা করবে, এমন ঘোষণার পরেই এই কৌশল প্রণয়ন করা হলো। ব্রিটিশ সরকার বলছে, এখন থেকে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নির্ধারণে বেশকিছু সরকারি সুপারিশ কার্যকর করা হবে। এর মাধ্যমে ফার্মগুলোর প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে মুনাফার স্বার্থে স্বল্প-মেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচলিত প্রথাকে বন্ধ করবে সরকার। এর মাধ্যমে কার্বন বাবলখ্যাত ঝুঁকিকে নুন্যতম পর্যায়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান