মার্কিন নারীদের বিশ্বকাপ জয়ে আর্থিক জয় নাইকির
আক্তারুজ্জামান : রোববার রাতে শেষ হয়েছে নারী ফুটবল বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। যে আসরে ইতিহাস গড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা। নেদারল্যান্ডের মেয়েদের ২-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারসহ মোট চারবার শিরোপা ঘরে তুলেছে দেশটির নারী দল। সফলভাবে এ আসর শেষ হওযার পর আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে ক্রীড়া সামগ্রী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্পন্সর নাইকি।
নাইকি সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ২৪ দলের মাঝে ১৪টির স্পন্সর ছিলো। স্পন্সরপ্রাপ্ত দলের মাঝে সেমিফাইনালের চার দলের তিনটি আছে। আর শিরোপাধারী মার্কিন নারী দলেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানিটি। বিশ্বকাপের পর তাদের তৈরি জার্সি বিক্রির হিড়িক পড়েছে বিশ্বব্যাপী। আর ইন্টারনেটে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ প্রতিষ্ঠান সিএনবিসি’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকপ্রদ এসব তথ্য। তারা জানিয়েছে, যে রাতে যুক্তরাষ্ট্র শিরোপা জিতেছে সে রাতেই ‘চার তারকা’ খচিত মার্কিন নারী দলের জার্সি বিক্রির ধুম পড়ে যায়। যে ‘চার তারকা’ চারবার শিরোপা জয়কে ইঙ্গিত করে (১৯৯১, ১৯৯৯, ২০১৫ ও ২০১৯)। নারী-পুরুষ, ছোট-বড় এবং বিভিন্ন সাইজের জার্সির বিক্রি মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো, বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের এক বিক্রয়কর্মী। নাইকির সিইও মার্ক পার্কার সিএনবিসিকে বলেন, ‘টুর্নামেন্টের মাঝপথেই জার্সি বিক্রির শীর্ষে উঠেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের নারী দলের জার্সি। তাছাড়া নাইকি’র ওয়েবসাইটে এক মৌসুমে বিক্রি হওয়া জার্সির শীর্ষেও ছিলো মার্কিন নারীদের টি-শার্টটি। শুধু তাই নয়, আরও অবাক করা তথ্য দিয়ে নাইকি জানিয়েছে, গত টুর্নামেন্টের চেয়ে তাদের জার্সি বিক্রি বেড়েছে ২০০ শতাংশ! আর ২০১৫ আসরের চেয়ে এবারের আসরে নারীদের ক্রীড়াপণ্য বিক্রি ছাড়িয়েছে ১৫০ শতাংশ।
নারীদের পণ্য বিক্রি এবং নারী আসরকে ঘিরে মুনাফা বৃদ্ধি পেলেও এক জঘন্য অভিযোগ আছে নাইকির বিরুদ্ধে। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন নারী খেলোয়াড় যদি গর্ভবতী হন তবে তাদের টাকার পরিমাণ অনেক কম প্রদান করে কোম্পানিটি। অলিম্পিক গেমসে চারবারের স্বর্ণজয়ী মার্কিন দৌড়বিদ অ্যালিসন ফেলিক্স প্রথম এ অভিযোগ সামনে আনেন।
নিউইয়র্ক টাইমসে তিনি লেখেন, আমি সন্তান-সম্ভবা হওয়ার পর নাইকি তাদের চুক্তির ৭০ শতাংশ কম অর্থ প্রদান করেছে। এ অভিযোগের পর নাইকি এ ধরণের কার্যক্রম থেকে সরে আসে এবং অঙ্গীকার করে, এখন থেকে কোন ক্রীড়াবিদ গর্ভবতী হলে তাদেরকে চুক্তির অর্থ কম দেয়া হবে না। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, এ ঘটনা তাদের ব্যবসায় কোন প্রভাব ফেলেনি। বরং চতুর্থ প্রান্তিকে তাদের ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিক্রি বেড়েছে।
যদিও পুরো টুর্নামেন্ট ছিলো ব্যাপকভাবে আলোচিত। কেননা ক্রীড়াঙ্গনে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে তীব্র আন্দোলন চলছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা খুব সামান্য পারিশ্রমিক পান। সেটা টুর্নামেন্ট থেকে এবং নিজেদের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান থেকেও। এটা নিয়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ আসর থেকে নরওয়ে নারী ফুটবল দল নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো। সম্পাদনা : ইকবাল খান