বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা যুক্ত করেছে
নূর মাজিদ : ২০২৪ সালের মধ্যে ৭ হাজার ২শ কোটি ডলারের রপ্তানি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤েপর বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন খুবই সম্ভব, বলে জোর দাবি করেছে দেশটির শীর্ষ অর্থনৈতিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ। প্রতিবেদনটি বলছে, গত জুনেই বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা নিকট ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। সূত্র : ব্লুমবার্গ
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গার্মেন্টস উৎপাদক নিউওয়েজ গ্রুপের কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর এই প্রথম কো¤পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের পণ্য সরাসরি বিক্রির সম্ভাবনা দেখছে। সুইডেনভিত্তিক রিটেইল ব্র্যান্ড হেন্স অ্যান্ড মরিৎজ (এইচঅ্যান্ডএম)-এর অন্যতম প্রধান সরবরাহক এই কো¤পানি। তিন দশক ধরে তারা বিভিন্ন ইউরোপীয় কো¤পানির সঙ্গে বাণিজ্যিক স¤পর্ক স্থাপন করেছে। কিন্তু, এখন প্রতিষ্ঠানটির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল ক্রেতা যেমন মেসি ইঙ্ক এবং গ্যাপ ইঙ্কের কাছ থেকে সরাসরি ব্যবসার প্রস্তাব এসেছে। নিউওয়েজ গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম মার্কিন গণমাধ্যমটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিউওয়েজের আরেক দেশীয় বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কো¤পানিটির বাণিজ্যিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান ক্রয়াদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে পাঁচ কোটি ডলার হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রুপ চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাত।
ব্লুমবার্গ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রা¤প ইতিমধ্যেই চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছেন, তার আওতায় চীনের গার্মেন্টস পণ্য না পড়লেও, ফের চলমান বাণিজ্য আলোচনা ব্যর্থ হলে এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেবে। কারণ ট্রা¤প আলোচনা ব্যর্থ হলে অবশিষ্ট ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানির ওপরেও শুল্কারোপ করবেন। এইখাতে চীনই এতদিন বিশ্ব নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু, এখন মার্কিন শুল্ক এড়ানোর লক্ষ্যে অনেক চীনা কো¤পানি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে কারখানা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটাও বাংলাদেশের সামনে বিপুল বিনিয়োগ আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দিন ব্যাপী চীন সফরও বেইজিং এবং ঢাকার মাঝে অর্থনৈতিক স¤পর্ক নতুন স্তরে উন্নীত করার প্রয়াসকে তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাল্টাপাল্টি নিজেদের যে সকল পণ্যে শুল্কারোপ করেছে, তার মাঝে প্রায় ২ হাজার পণ্যের বাজার ইতিমধ্যেই সফলভাবে ধরে ফেলেছে ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া। এই দেশগুলোতে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো সরে আসছে, ফলে মজুরিও বাড়ছে। সেই বিবেচনায় কর রেয়াত, দক্ষ ও স্বস্তা শ্রম, অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা এবং আবহাওয়াগত কারণেও বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানা সরিয়ে এনে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি। আর চীন সেটাই করছে।
নিউওয়েজ ভাইস-চেয়ার আসিফ ইব্রাহিম বলেন, মার্কিন আমদানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠিত স¤পর্ক আছে। যার সুযোগে তারাও স্থায়ী সরবরাহকারক হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছেন। এটা একটা বাড়তি গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি করেছে বাংলাদেশের জন্যে। সম্পাদনা : ইকবাল খান