দুধ নিয়ে দ্বিতীয়দফার পরীক্ষায় ১০টি নমুনাতেই মিললো অ্যান্টিবায়োটিক
ফাতেমা আহমেদ : বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করেও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে আবারও দাবি করেছেন গবেষকরা। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জানান, বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় ১০টি নমুনার ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সূত্র : ইউএনবি, আরটিভি অনলাইন, বাংলানিউজ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে প্রাণ, মিল্কভিটা, আড়ং, ইগলু ও ফার্ম ফ্রেশ কোম্পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এবারও আগের ৫টি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪টি, ৬টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৩টি এবং ১টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি।
এছাড়া রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে সংগ্রহ করা খোলা দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।
এর আগে গত ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলন করে দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি আছে জানালে সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিব এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পক্ষ নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছিলো। এর মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় দুধের ভেজাল নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করা হলো। এর মধ্যেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা জানালেন তিনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে মানবদেহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার কথা বলেছিলাম আমরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জরুরি প্রয়োজনে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারি সংস্থাসমূহ যেমন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস্ অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচ) ইত্যাদি ল্যাবরেটরিগুলোতে যেন এখন থেকে নিয়মিতভাবেই দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। বিএসটিআইয়ের দেড় যুগের পুরনো দুধের স্ট্যান্ডার্ডে (ইধহমষধফবংয ঝঃধহফধৎফ, ইউঝ ১৭০২. ২০০২) বর্তমানের নয়টি পরীক্ষার সঙ্গে কমপক্ষে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পরীক্ষার মতো দু’টি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুধের এই স্ট্যান্ডার্ডকে যুগোপযোগী করার জন্যও আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম। এতে আমরা আরও জানিয়েছিলাম যে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভব থেকেই আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা এই পরীক্ষাটি মাঝে মাঝে করার চেষ্টা করবো।’
বিজ্ঞপ্তিতে ওই শিক্ষক বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও পূর্বোক্ত ৫টি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল ৪টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন)। এর মধ্যে আগের বারে ছিলো না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)। ১০টি নমুনার মধ্যে ৩টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪টি, ৬টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৩টি এবং ১টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি আমাদের প্রকাশিত এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে নিজেদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে এবং এভাবে দেশের দুধের মানের উন্নতি ঘটবে। উপরন্তু, জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।’