বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা
মুরাদ হাসান : দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার উত্তরের কয়েকটি জেলায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট বিভাগের সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে গতকাল ১৫টি নদীর ২৩টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
লালমনিরহাট থেকে রিয়াজুল ইসলাম জানান, লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিস্তা, ধরলার পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল সকাল ৯টায় তা বেড়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ৫ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলমগ্ন হয়েছে নতুন নতুন এলাকা, পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে নি¤œআয়ের মানুষজন। পানি ঢুকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, গড্ডিমারী, বড়খাতা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও রেড এলার্ট জারি করে মাইকিং করা হচ্ছে।
নীলফামারী থেকে স্বপ্না আক্তার জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সকালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বিশেষ করে সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধগুলো। পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ সহ¯্রাধিক পরিবার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে রাখা হয়েছে। সকল কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে অনিরুদ্ধ রেজা জানান, কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়ছে চর-দ্বীপচরসহ নদনদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে কাঁচাপাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গতকাল সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
সিরাজগঞ্জ থেকে রেজাউল করিম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল জেলায় যমুনা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি, কাজিপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধির কারনে নি¤œাঅঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পুঠিয়াবাড়ি ও চরমালশাপাড়া এলাকায় বাঁধের নিচে বসবাসরত ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রবেশ করছে পানি।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৪২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
সিলেট থেকে আব্দুল আহাদ জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে জনপদ তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পিয়াইন ও সারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গোয়াইনঘাটের
বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার সবকটি হাওর। এদিকে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জকিগঞ্জ ও ওসমানীনগরে নদীভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সুনামগঞ্জ থেকে সাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান- জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানির বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জামালপুর থেকে শরিফুল ইসলাম জানান, যমুনার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির তোড়ে ইসলামপুরের পূর্ববামনা ও উলিয়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ সড়ক বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০টি গ্রাম বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।