দেশের বিভিন্ন জেলায় পানিবন্দি ৫ লাখেরও বেশি মানুষ
মুরাদ হাসান : যমুনা, সুরমা ও ব্রহ্মপুত্রসহ কয়েকটি নদীর পানি গতকাল রোববারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরসঙ্গে বেড়েছে পানিবন্দি লোকজনের দুর্ভোগও। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে-
কুড়িগ্রাম থেকে অনিরুদ্ধ রেজা জানান, কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে বিপদসীমার ধরলা সেতু পয়েন্টে ৭৯ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ৭৫ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নুন খাওয়া পয়েন্টে ৩৯ সে.মি ও তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ২২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে এ চারটি নদ-নদীর অববাহিকার চর-দ্বীপচর ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কমপক্ষে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জামালপুর থেকে শরিফুল ঝোকন জানান, উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ৯০ মেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। জেলার ৬ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৭৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট থেকে রিয়াজুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতিতে জেলায় ৩৪টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ২০টি ইউনিয়নে ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে জেলার ত্রাণ কর্মকর্তার তথ্য মতে, ১৬ হাজার ৮১৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে শহীদুল ইসলাম জানান, অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলার মধ্যে ১৪টি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরীসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে হালদার পানি নারায়ণহাটে, সাঙ্গুর পানি দোহাজারী ও বান্দরবানে এবং মাতামুহুরীর পানি চকরিয়ার চিরিঙ্গায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মূহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পরশুরামে ৫টি, ফুলগাজীতে ৭টি স্থানে ভাঙ্গনে অন্তত ৩১ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের মোট ১২ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কমতে গিয়ে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ কারণে ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদী তীরের নিম্নাঞ্চল এবং দুর্গম চর প্লাবিত হয়েছে।
রাঙামাটি থেকে হারুনুর রশীদ জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছে এক হাজার পরিবার ও প্রায় ৪ হাজার লোক। বাঘাইছড়ি উপজেলা ইউএনও মো. আহসান হাবিব বিটু প্রতিবেদকে মুঠোফোনে জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৩২৭ পরিবারের মাঝে ত্রাণ করা হয়েছে। বরকল উপজেলার ১৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে ৩ হাজারের অধিক পরিবার।