বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট
মুরাদ হাসান : সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙনে দুর্গত এলাকার লোকজন বসতবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। অনেক স্থানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ রেজা। বন্যায় ২৮৪ বিদ্যালয়ে পাঠদান রয়েছে। এছাড়াও ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় জেলার দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। জেলায় ৪০৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ হাজার জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
লালমনিরহাট : জেলা প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম জানান, লালমনিরহাটে ৫ উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার ৪৪টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুর: জামালপুর প্রতিনিধি শরিফুল ঝোকন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলার যমুনার তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসাবে দেওয়াগঞ্জ পৌর সভা ও আট ইউনিয়নে ৮০ হাজার ও ইসলামপুরের সাত ইউনিয়নের ৭০ হাজারসহ জেলায় এক লাখ ৯৬ হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।
বগুড়া : জেলায় প্রতিদিন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় বানভাসী পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী উঁচু স্থানসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ধুনট, সারিয়াকান্দী ও সোনাতলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই ৩ উপজেলার ৬১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাঠিয়েছেন প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াদুদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলা প্রতিনিধি তৌহিদ নিটল পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান- টানা বর্ষণ ও ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বাঁধের আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা ও রহিমপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ও রাতে কমলগঞ্জ পৌরসভার রামপাশা গ্রামেরসহ ৪ টি ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ২৫টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে বলে তথ্য পাঠিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি স্বপন দেব।
ধামইরহাট (নওগাঁ): উপজেলা প্রতিনিধি আজিজ মন্ডল জানান, পানি বৃদ্ধি পেয়ে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আত্রাই নদী, চিরী নদী, ছোট যমুনা নদী, ঘুখষি খাড়ি, কোতলা খাড়ি, টুটিকাটা খাড়ি, শিয়ারা খাড়ি, জবাইবিল, ডুম্বরবিল, তাতিমারি বিল, রসুলবিল, গন্দিহার, সাতবিলা,বুড়িদহবিলের আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে।
গাইবান্ধা : জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানান, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ১৩৫টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকার ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। এতে বন্যা কবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৪টি উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকায় ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে।