রংপুর পল্লী নিবাসে অন্তিমশয়ানে এরশাদ
ইউসুফ বাচ্চু ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে রংপুরের তার নিজবাড়ী পল্লী নিবাস লিচু বাগানের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সামরিক মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়। সামরিকবাহিনী একটি বিশেষ দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এর আগে ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪০মিনিটে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে জাতীয় ও সামরিক পতাকায় মোড়ানো এরশাদের কফিন বহন করা হয়। বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে এরশাদের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসে অবতরণ করে। দুপুর ১২টার পর রংপুর শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে চতুর্থ ও শেষ জানাজার জন্য এরশাদের মরদেহ আনা হয়। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় শরিক হয়। জানাজার মধ্যেই রংপুরে এরশাদের দাফনের দাবিতে হট্টগোল শুরু হয়।
জানাজার আগে বক্তৃতায় মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তোফ রংপুরে এরশাদের দাফনের আবারও দাবি তোলেন। এরপর জি এম কাদের বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু তার বক্তব্যের মাঝেই দাফনের বিষয়টি উল্লেখ করে শ্লোগান শুরু হয়। বেলা ২টা ২৫ মিনিটে এরশাদের জানাজা শুরু হয়। জানাজার পর শত শত কর্মী এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি ঘিরে ধরেন। তারা রংপুরে কবর দেওয়ার দাবি জানান। গাড়িটিতে ছিলেন মেয়র মোস্তাফিজার। ময়দানে মাইক থেকে তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়, মরদেহ যেন রংপুর থেকে ঢাকায় না যায়। এ পরিস্থিতিতে বেলা তিনটার দিকে এরশাদের মরদেহ শহরে তার বাড়ি পল্লি নিবাসে নেওয়া হয়। এরপর সেখানেই দাফন করার ঘোষণা দেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, এরশাদকে রংপুরে দাফন করার ব্যাপারে ঢাকায় যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা সম্মতি দিয়েছেন বলে আমি এ সিদ্ধান্তের কথা জানালাম।
মঙ্গলবার জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরশাদের প্রতি রংপুরের গণমানুষের আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতাবোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এরশাদকে রংপুরেই দাফন করতে অনুমতি দিয়েছেন রওশন এরশাদ। এরশাদের কবরের পাশে তার জন্য কবরের জন্য জায়গা রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন রওশন।
দাফনকার্য পরিচালনা করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দাফনের সময় এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদেরসহ পরিবারের অন্য সদস্য, আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, দলীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় পার্টি ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাসদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরশাদের মৃত্যুর আগে ও পড়ে তার দাফন নিয়ে মতবিরোধে পড়ে তার দল ও পরিবার। রংপুরে মরদেহ নেয়ার আগে পর্যন্ত পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিলো ঢাকায় সেনা কবরস্থানে দাফন করার কথা বলা হয়েছিল পরিবার থেকে। সে অনুযায়ী ঢাকায় সামরিক কবরস্থানেও এরশাদের জন্য কবর খনন করা হয়। তবে রংপুরের নেতাকর্মীরা এরশাদকে দাফনের জন্য তার পল্লী নিবাসে কবর খনন করেন। দাফনের আগে এরশাদপুত্র স্বাদ তার বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
এদিকে এরশাদের মরদেহ দেখতে সকাল থেকেই নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ওই ঈদগাহ ময়দানে সামনে ভিড় জমায়। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা আবেগ্লাপুত হয়ে পড়েন।