বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার
মুরাদ হাসান : পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্জলে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছেনি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। এদিকে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে জামালপুর ও কুড়িগ্রামে শিশু-কিশোরসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জামালপুর থেকে শরিফুল ঝোকন জানান, জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার ৭ উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গত দুদিনে ইসলামপুর ও দেওয়ানঞ্জে ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট । বন্যা আক্রান্তরা বলছেন, তাদের কাছে এখনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বলছেন, বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যার চেয়ে ত্রাণের বরাদ্দ কম হওয়ায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী।
কুড়িগ্রাম থেকে অনিরুদ্ধ রেজা জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। বাড়ছে পানিবন্দি ও বন্যার পানিতে ডুবে নিহতের সংখ্যাও। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ও পর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ৪ শিশুসহ ৫ জন এবং বন্যার পানিতে ডুবে ৩ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে ঢেলে আসা গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। জেলার বন্যাকবলিত চার উপজেলা সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদরের ২১৩ গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বানভাসীরা বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ১০ উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, সারা জেলায় ২৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় পানিবন্দি ২৫ হাজার পরিবারে ইতিমধ্যে পানিবাহিত রোগবালাই দেখা দিয়েছে। জেলা ত্রাণ শাখার তথ্য মতে, সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮১৬টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৩৩৪টি পরিবার বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত পরিবার গুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগসহ নানা দুর্ভোগে পড়েছে ভুক্তভোগিরা। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
শেরপুর থেতে তপু সরকার জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের পাঁচটি উপজেলার বন্যায় প্রায় একলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম জানান, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্তদের মাঝে সরকারিভাবে ৩৫ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। সরকারের আছে আরো ২৫০ টন চাল চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।