দেশে শুরু হয়নি সামুদ্রিক শৈবালের চাষ, চলছে গবেষণা
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র ‘ডেভেলপমেন্ট অফ কালচার অফ সী-উইডস ইন সাউথ-ইস্টার্ন কোস্ট অফ বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় সামুদ্রিক শৈবাল চাষের ‘লাইন, জাল ও ঝুলন্ত রশি’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এই পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবালের চাষ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের গবেষকদল কক্সবাজার জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী সেন্টমার্টিন, বাকখালী ও ইনানী এলাকার জোয়ার-ভাটার অর্šÍবর্তী স্থানে আনুভূমিক জাল পদ্ধতি (২০ সেন্টিমিটার ফাঁসযুক্ত নারিকেলের ছোবড়ার রশি দিয়ে ৪ মিটার গুণ ৪ মিটার জাল) ব্যবহার করে সামুদ্রিক শৈবাল প. ৎধপবসড়ংধ ও য সঁপরভড়ৎসরং এর চাষ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
বিএফআরআই এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম জানান, এই আনুভূমিক জাল ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ৩০ কেজি, বাঁকখালীতে প্রায় ১৮ কেজি এবং ইনানীতে প্রায় ১৫ কেজি যুঢ়হবধ সঁপরভড়ৎসরং এবং সেন্টমার্টিনে পধঁষবৎঢ়ধ ৎধপবসড়ংধ প্রায় ১৫ কেজি উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি ১৫ দিন অন্তর প্রায় ৫০ থেকে ৭০ কেজি সতেজ যুঢ়হবধ সঁপরভড়ৎসরং আংশিক আহরণ করা যায়। যা শুকানোর পর প্রায় ২০ থেকে ২৫ কেজি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে এই শৈবাল প্রতি কেজি দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে প্রায় ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আয় করা যায়। এভাবে মাত্র ৮৫০ টাকা ব্যয়ে তৈরী করা ৪মি. গুণ ৪মিটারের একটি আনুভূমিক জাল ব্যবহার করে মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
এদিকে এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সী-উইড চাষের উন্নয়নে গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ উপকূলে সী-উইড চাষ ও সী-উইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা প্রকল্প’। বাংলাদেশ সরকারের ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২১ সালের জুন মাসে। তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল হতে ১১৭টি প্রজাতি সনাক্ত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সামুদ্রিক শৈবাল অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে প্রায় ৯২০০ সী-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২২১ প্রজাতি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে প্রতি বছর সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের প্রায় ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত এবং ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়ার পাশাপাশি সামুদ্রিক শৈবালের চাষ এবং রপ্তানি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। অভ্যন্তরীণ খাদ্য ভা-ারে ঘাটতি দেখা দিলে এই সামুদ্রিক শৈবাল আগামী দিনের খাদ্য ও পুষ্টির বিকল্প ভা-ার হতে পারে। সম্পাদনা : সমর চক্রবর্তী