মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাইদ লাহোরে গ্রেপ্তার
জিয়ারুল হক : ভারত এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল চাপের মুখে অবশেষে জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদকে গ্রেপ্তার করলো পাকিস্তান। গ্রেপ্তারের পরই তাকে গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। আনন্দবাজার
বুধবার লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা যাওয়ার পথে পাক-পাঞ্জাব প্রদেশের সন্ত্রাস দমন শাখার হাতে গ্রেপ্তাার হয় ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ। সন্ত্রাসে অর্থ যোগানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাফিজ সাঈদের গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তির হাওয়া নয়াদিল্লিতেও। পাশাপাশি এই ঘটনাকে পরোক্ষভাবে ভারতের সাফল্য হিসেবেও দেখছেন কূটনৈতিক শিবির।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ডন’-এর খবর অনুযায়ী, সন্ত্রাস সংক্রান্ত একটি মামলায় গুজরানওয়ালা আদালতে জামিনের জন্য যাচ্ছিলেন হাফিজ সইদ। গোপন সূত্রে আগেই সেই খবর পেয়েছিলেন সন্ত্রাসদমন শাখার গোয়েন্দারা। মাঝপথেই তাকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নেন তারা। তার পর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
তবে পাক প্রশাসনের তরফে এখনও গ্রেপ্তাারির বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। একটি সূত্রে জানা গেছে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশের পরই হাফিজকে গোপন একটি জায়গায় নেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসদমন শাখার তরফে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তারের বিষয়ে পরে সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ নতুন নয়। ভারতসহ রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিকাংশ সদস্য এ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছে। জাতিসংঘ একাধিক বার ইসলামবাদকে সতর্ক করেছে, হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কার্যত কোনও কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি চরম হুঁশিয়ারি দেয় জাতিসংঘের ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)। জঙ্গিদের অর্থ যোগানের উপর কড়া নজরদারি এবং সেই যোগানের পাইপলাইন বন্ধ করার ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক সংস্থা এই এফএটিএফ।
আন্তর্জাতিক মহলের এই প্রবল চাপের মুখেই এ মাসের গোড়ায় ৩ জুলাই হাফিজ সইদসহ ১৩ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পাক প্রশাসন। জঙ্গিদের অর্থ যোগান দেয়া, টাকা পাচার, জঙ্গি কার্যকলাপের মতো ধারায় ২০টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়। তারই একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাফিজকে।
হাফিজের গ্রেপ্তারিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে নয়াদিল্লিতে। কারণ ২৬/১১ মুম্বাই জঙ্গি হানার মাস্টারমাইন্ড হাফিজকে গ্রেপ্তার করার জন্য ভারত দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের একাধিক জায়গায় জঙ্গি হানার ঘটনায় হাফিজের যুক্ত থাকার বহু তথ্যপ্রমাণ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলেও হাফিজের গ্রেপ্তারি নিয়ে চাপ তৈরির কূটনৈতিক কৌশল বজায় রেখেছে নয়াদিল্লি। শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় খুশির হাওয়া সাউথ ব্লকে।