২০৩০ সাল নাগাদ দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৪০ ভাগ কমবে
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশে কলকারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য জলের অধিকাংশ নদীতে মিশে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। এই হাজার হাজার গ্যালন বর্জ্য জলের প্রভাবে শুধুমাত্র নদী ও মৎস্য সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি ও কৃষি শস্যও। ভারী ধাতু এবং বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের কৃষি শস্য এমনকি গরুর দুধেও পাওয়া গেছে।
গাজীপুরের তুরাগ নদীর যে অবস্থা দেখা যায় তাতে কোনোভাবেই তাকে নদী হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। কালো পানি আর প্লাস্টিক-পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্যরে একটি নিষ্কাশনের মাধ্যম হয়েছে নদীটি। শুধু গাজীপুর নয় ঢাকা, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জসহ শিল্পোন্নত শহরগুলোতে এই ধরনের জলাশয়ের চিত্র নতুন কিছু নয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে ‘অণুজীবের মাধ্যমে বর্জ্যজল শোধন’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও অ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুজ্জামান এবং এম এস ফেলো কৌশিক চক্রবর্তী জানান, অতিরিক্ত পরিমাণ পানি দূষণের ফলে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণির বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে, আবার অন্যদিকে মানুষের গৃহস্থালি এবং সেচের জন্যও অব্যবহার্য হয়ে যাচ্ছে।
তারা জানান, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। বাংলা সাহিত্য থেকে শুরু করে বাঙালির খাদ্যাভাস পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রয়েছে নদ-নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলজ সম্পদের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের আবহমান গল্পে যে খরস্রোতা নদী আর হরেক রকমের মাছের উল্লেখ পাওয়া যায়, একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গড়ে উঠেছে হাজারো কারখানা। আর সেই সব কলকারখানার বর্জ্য জল শোধন না করেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে নদী, বিল বা অন্যান্য জলাশয়ে।
জাতিসংঘ বিশ্ব পানি উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে উৎপাদিত বর্জ্য জলের মাত্র ১৭ ভাগ শোধন করা হয়, যা এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্ব পানিসম্পদ গ্রুপের একটি রিপোর্টের বরাতে এই শিক্ষকরা আরও জানান, বাংলাদেশে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা ভূগর্ভস্থ পানির তুলনায় প্রায় ৪০ ভাগ বেশি থাকবে। পানি সংকটের এই অবস্থার জন্যেও দায়ী করা যেতে পারে শিল্প কলকারখানাগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ও যত্রতত্র পানির ব্যবহার। সম্পাদনা : কাজী নুসরাত