খেলাপিরা জানতে চান, ঋণ পরিশোধ শুরু করলেই কি নতুন ঋণ পাওয়া যাবে
রমজান আলী : খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই পদক্ষেপে খুশি ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যাংকগুলোয় ধর্না দিচ্ছেন অনেকেই, কোনো কৌশলে সুবিধা নিয়ে খেলাপির তকমা মোছা যায় তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। কোনো কোনো খেলাপি ব্যাংকে সরাসরি যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ফোনেই নিচ্ছেন খোঁজখবর। তবে ‘খেলাপি’ এবং ‘ব্যাংক’ দুই পক্ষই হিসাব কষছে লাভক্ষতির। খেলাপিদের প্রশ্নÑঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু করলেই কি মিলবে নতুন ঋণ? এজন্য দুই মাসের বেশি কি অপেক্ষা করতে হবে? আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখছেন তাদের স্বার্থ।
মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় খেলাপিঋণ সুবিধা নিয়েই চলছে আলোচনা। মোট খেলাপিঋণের ২ শতাংশ এককালিন জমা দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে একজন ঋণ খেলাপি ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এমন পরিপত্রের ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থিতাবস্থার আদেশ দুই মাস পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তবে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো ঋণখেলাপি এ সুবিধা নিলে এ সময়ের মধ্যে নতুন করে তিনি কোনো ঋণ পাবেন না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ওই প্রজ্ঞাপন নিয়ে আপিল বিভাগের আদেশ পরিপালন করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। সরকারের দেয়া এমন সুবিধা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে খেলাপিরা। তবে দীর্ঘদিনের ঋণ পরিশোধের চেয়ে নতুন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেই বেশি আগ্রহ তাদের। মতিঝিলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে একজন খেলাপি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খোঁজ নিতে আসা এক ব্যক্তি জানান, ব্যাংকে আবেদনের জন্য সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত করলে কেমন সুবিধা পাওয়া যাবে সেসব হিসাব-নিকাশ করছেন তারা। এমন অনেক ব্যাংকেই বিভিন্ন খেলাপি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খোঁজ নিতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসেই খেলাপিঋণ বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ। কারণ, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপিঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা মোট বিতরণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান