কৃষিঋণের বিতরণে বেসরকারি ৮ ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করতে পারেনি
রমজান আলী : ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বেশিরভাগ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিতরণ করলেও আটটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
ব্যাংকগুলো হলোÑএবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।
এগুলোর মধ্যে এক টাকাও কৃষিঋণ বিতরণ করেনি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও মধুমতি ব্যাংক। কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ এসব ব্যাংকের শাস্তি হিসেবে অনর্জিত অংশের পুরোটাই অথবা তিন শতাংশ হারে বিনাসুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লীঋণ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকের তালিকায় থাকা এবি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিলো ৩০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এখন ১৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকা অথবা এর তিন শতাংশ রাখতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৪৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মেঘনা ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংক ৫৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও এর বিপরীতে এক টাকাও ঋণ বিতরণ করেনি।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ১২৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ২৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৮৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক ২০২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৭৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান মাত্র এক কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো। কিন্তু এক টাকাও ঋণ বিতরণ করেনি ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবস্থা চালু করে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ অথবা বিকল্পভাবে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার তিন শতাংশ হারে হিসাবায়নকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১১ হাজার ২৯৩ টাকা। বাকি ১২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো।
আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছয় হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তারা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে এক হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে এক হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। যা বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। শীর্ষ তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকা সোনালী ব্যাংক এক হাজার ২৫৯ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান