উপকূলের পরিশোধিত লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিক
মতিনুজ্জামান মিটু : বাঁকখালী নদীর মোহনার প্রতি র্বগকিলোমিটার এলাকায় পানির উপরে ২০ হাজারেরও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক ভাসতে দেখা গেছে। মহেশখালী, টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করা প্রতি কেজি অপরিশোধিত লবণে প্রায় ১ হাজার এবং বাণিজ্যিক পরিশোধিত লবণে ৭০০ থেকে ৯০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। লাবণী পয়েন্টে সমুদ্রসৈকত এবং উখিয়া ও রামুর সংযোগস্থলের কাঁকড়া বিচেও প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা কক্সবাজার শহরের চেয়ে তিনগুণের বেশি। কাঁকড়া বিচ নদীর মোহনায় হওয়ায় এ নদীর দীর্ঘপথ দিয়ে নেমে আসা বিশাল এলাকার প্লাস্টিক র্বজ্য বঙ্গোপসাগরে মিশে যাচ্ছে। যা সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের জন্য মারাত্মক হুমকি।
গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি সড়কের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর ‘উপকূলীয় মৎস্যসম্পদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা:এসডিজি প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষকরা আরও জানান, মিঠাপানির মাছ চাষে বিশ্বরেকর্ড করলেও উপকূলীয় লোনাপানির মাছ ও জলজ সম্পদের দিকে এতোদিন আমরা নজর কম দিয়েছি। বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় সমপরিমাণ (শতকরা ৮০ভাগ) সমুদ্রাঞ্চল অর্জনের পর মিঠাপানির পাশাপাশি উপকূলীয় এবং সমুদ্রসম্পদেও আমাদের পূর্ণ নজর দিতে হবে। উপকূলে সনাক্ত করা সি-উইডের ১১৭টি প্রজাতির মধ্যে ১০টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান। অতিথিদেও মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান(অতিরিক্ত সচিব) দিলদার আহমদ ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক। অন্যান্যের মধ্যে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেনি ফিসারিজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. হাসান আহম্মদ প্রমুখ। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গবেষক ও কর্মকর্তার উপস্থিত থেকে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন।
তারা বলেন, বর্তমানে দেশে মাছের উৎপাদন ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ মেট্রিক টন হলেও বিস্তীর্ণ উপকূলীয় সুন্দরবনের চিংড়ি ও কাঁকড়া উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র ২ দশমিক ৮৪ লাখ টন। অথচ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের সামুদ্রিক জলসীমায় সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন মাত্র ৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যা মাছের মোট উৎপাদনের শতকরা ১৫ দশমিক ৩১ ভাগ। অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক মাছ ও সি উইডের ব্যাপক চাষাবাদ এখন সময়ে দাবি।
সামুদ্রিক শৈবালের নানাধরণের ব্যবহারের কথাও তুলে ধরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলেন, খাদ্য হিসেবে দুষ্প্রাপ্য উপকূলীয় চিত্রা, দাতিনা ও কাইন মাগুর মাছের প্রজননক্ষম ব্রুড লালন করা হচ্ছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি গবেষণায় প্রতি হেক্টরে হরিণা চিংড়ির উৎপাদন ২ হাজার ৫০০ কেজি পাওয়া গেছে এবং তাদের বেঁচে থাকার হার শতকরা ৮০ ভাগ। এমনকি তিন মাসে চাকা চিংড়ির গড় ওজন ১৩ গ্রাম পাওয়া গেছে। যা বাজারজাত করার উপোযোগী।
বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের ৮২ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং প্রজনন মৌসুমে (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তরা বলেন, গবেষকরা ১৬টি মাছের প্রজননকাল বের করেছেন যা এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব