অবশেষে চন্দ্রযান-২ রকেটের সফল উৎক্ষেপণ করলো ভারত
ফাতেমা আহমেদ : সফলভাবে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদের উদ্দেশ্যে রকেট উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। এক সপ্তাহ আগে এ অভিযান শুরুর কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শেষ মুহূর্তে তা উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা মহাকাশ স্টেশন থেকে ‘চন্দ্রযান-২’ নামে এ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়। সূত্র : বাংলানিউজ, বিডিনিউজ
ভারতের মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা ইসরো’র প্রধান কে সিভান জানান, ‘এক সপ্তাহ আগে নির্ধারিত প্রথম দিনের অভিযান বাতিলের পর সোমবার সফলভাবে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়েছে।’ প্রায় এক হাজার ২৬৭ কোটি টাকা অর্থমূল্যের এ অভিযানের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনো মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করবে বলে আশাবাদী ভারত।
টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) কর্মীদের অ্যাকাউন্টগুলোতে সরাসরি এ উৎক্ষেপণ অভিযান সম্প্রচারিত হয়। সফল উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিটের মাথায় মহাকাশযানটি বাইরের বায়ুম-লে প্রবেশের পরপরই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সবাই করতালি দিতে থাকেন। এযাবৎ এটিই ছিলো ইসরোর সবচেয়ে দুরূহ অভিযান।
এ অভিযানে ভারত তার সবচেয়ে শক্তিশালী জিএসএলভি এমকে-৩ নামক রকেট ব্যবহার করছে। এর ওজন ৬৪০ টন ও উচ্চতা ৪৪ মিটার, যা একটি ১৪তলা ভবনের সমান।
চাঁদের যে অংশে চন্দ্রযান-২ এর নামার কথা এর আগে সেখানে কোনো দেশের কোনো মহাকাশযান নামেনি। ২০০৮ সালে চাঁদের কক্ষপথে যাওয়া ভারতের প্রথম মহাকাশযান চন্দ্রযান-১ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহে থাকা হাইড্রক্সিল আয়নের হদিস পেয়েছিলো। এবারের দ্বিতীয় অভিযানের উদ্দেশ্য চন্দ্রপৃষ্ঠের বালিকণায় থাকা খনিজ ও মৌল পদার্থ সম্বন্ধে জানা। চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি, এ কারণে এ মহাকাশযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম পড়ছে।
চাঁদের বুকে পা রাখতে চন্দ্রযান-২কে তিন দশমিক ৮৪ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। হিসাব অনুযায়ী, রওনা হওয়ার দেড় মাস পর চলতি বছরের ৬-৭ সেপ্টেম্বরের দিকে এটি চাঁদের পিঠে ‘বিক্রম’ অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এরপর এ ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসবে ২৭ কিলোগ্রাম ওজনের ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় অরবিটারটি থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের দূরত্ব থাকবে মাত্র ১০০ কিলোমিটার। চাঁদে অনুসন্ধান চালানোর পর রোভার ‘প্রজ্ঞান’ সেখানেই অকেজো হয়ে পড়বে; তবে তার তথ্য চলে যাবে ভারতের মহাকাশ কেন্দ্রে। অরবিটারটি এরপরও মহাকাশে থাকবে, চাঁদকে প্রদক্ষিণের পাশাপাশি পাঠাবে একের পর এক ছবি।
এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইসরো প্রধান আরো বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে চাঁদে এক ঐতিহাসিক অভিযানের শুরু হলো। এ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে স্যালুট জানানো আমার কর্তব্য।’