২০৩০ সালের মধ্যে হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ২০৩৪ সালে দেশের বাজেট হবে এক ট্রিলিয়ন ডলার, বললেন অর্থমন্ত্রী
শোভন দত্ত : অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘২০৩৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট হবে প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা এ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকার অধিক বাজেট দিয়েছি। আপনারা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন, ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাজেট হবে এক ট্রিলিয়ন ডলার। সূত্র : বাসস, বাংলানিউজ, জাগোনিউজ
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আয়োজিত দু’দিনব্যাপী গুড প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট ফোরাম আয়োজিত সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী ২০৩৪ সালের জন্য বাজেটের আকার ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এটি সম্ভব, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং জনগণ এর সুফল পাবে। এটি একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
বাজেট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চলতি বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার। ২০৩৪ সালে এর আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার (১০০ কোটি সমান এক বিলিয়ন ও এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন)।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাজেটের পাশাপাশি দেশে অর্থনীতির আকার বাড়ছে। গত ১০ বছরে অর্থনীতি নিয়ে যা বলেছি, তাই হয়েছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ৩২তম অর্থনীতির দেশ হবে। আমরা বিনিয়োগ করে যাচ্ছি, ফল এখনও পাইনি, তবে খুব শিগগিরই পাবো।’
দেশের সার্বিক উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে। ওই সময় বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে, এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকবে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আইএমএফ বৈশ্বিক অর্থনীতির যে প্রক্ষেপণ প্রকাশ করেছে, সে তথ্যের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গ এ বিশ্লেষণ করেছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে চীন। চীনের অবদান থাকবে ২৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভারত।’
বাংলাদেশের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অবদান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এডিবি দেশের নানা উন্নয়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে, আরও ১০ বিলিয়ন ডলার পাইপলাইনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। তবে প্রধান উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশ হতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই মধ্য আয়ের দেশ হয়েছি এবং এখন ভারত, ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনের মতো আমাদেরকেও উন্নয়নশীল দেশ হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন শহর এবং গ্রামে সকল ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। সরকার চাচ্ছে, শহর ও নগরবাসী যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে, গ্রামবাসীরাও যেন সেই সুবিধা ভোগ করতে পারে।’ দুদিনব্যাপী এই সেমিনার সরকারকে এগিয়ে যাবার পথ দেখাবে, সরকার নতুন ধারনা পাবে এবং সরকার এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অর্থমন্ত্রী তার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করি। কিন্তু, সেদিনটি ছিলো আমার জীবনের চরম কষ্টের দিন। কারণ, এর তিন দিন আগে অর্থাৎ ১০ জুন ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি ও হাসপাতালে ভর্তি হই। ডেঙ্গুর যন্ত্রণা কী, আমি বুঝি। আল্লাহ যেন আর কারও ডেঙ্গু না দেয়।’
ডেঙ্গু জ্বরের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এর ভয়াবহতা আমি বুঝি। এ যন্ত্রণাও বুঝি। চিকুনগুনিয়ার পরেই আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। এ অসুস্থতা নিয়েই গত ১৩ জুন সংসদে আসি। আমার বিশ্বাস ছিলো, আমি প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করতে পারবো। কিন্তু, যা ভেবেছিলাম, বাস্তবতা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিবেশন শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি, তখন থেকে পরবর্তী সাত-আট মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে ‘ব্ল্যাংক’ ছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না। কোনো রকমে গিয়ে আমার আসনে বসলাম। তখন কেবল মনে হচ্ছিলো, প্রবল এক ভূমিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। সে ভূমিকম্পের কারণেই যেন ক্ষণে ক্ষণে আমার কম্পন হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, আমি সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। তখন মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলাম।’
অনুষ্ঠানে মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পিডি (প্রকল্প পরিচালক) ও ডিপিডিদের (উপ-প্রকল্প পরিচালক) থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে।’
ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ অ্যাওয়ার্ডেড প্রকল্পের স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাদের ভালো কাজের এই স্বীকৃতি দেশের অন্যান্য কর্মকর্তাদের ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’ এর আগে অর্থমন্ত্রী সেরা প্রকল্প এবং প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন।
এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ পদক বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মান বজায় রাখতে হবে। তাহলে জনগণ এর সুফল পাবে, প্রকল্প ব্যয় কম হবে এবং উন্নয়ন টেকসই হবে।’
এসময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : ফাতেমা আহমেদ, রেজাউল আহসান