বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর আগেই তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ
নূর মাজিদ : আগামী বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্ম্যবার্ষিকী। যার চেষ্টা ও ত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই উপলক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশটি স¤পর্কে জানা এবং তাদের সাফল্য থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ ভারতীয়দের। বাংলাদশ যে আদর্শে বিশ্বাস করে এবং যে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে চলেছে তা ভারতের শ্রদ্ধা লাভ করার ক্ষমতা রাখে নিঃসন্দেহে। গতকাল সোমবার ভারতের শীর্ষ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এমন মন্তব্য করে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
প্রথমেই বাংলাদশের স্বাধীনতা নিয়ে যে ভুল ধারনা আছে সেটার অবসান হওয়া উচিৎ। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনীর বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেনি। বরং এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিলো। সেভাবেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে মুল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এই লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে, সেখানে ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ ছিলো যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে। অর্থাৎ মূল ত্যাগ বাংলাদেশের জনগণ করেছে।
আগামী বছর যখন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করবে, তখন ভারতই সেখানে মূল আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত আর সোভিয়েত রাশিয়াই ছিলো বাংলাদেশের প্রকৃত সমর্থক। অন্যদিকে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। তবে পাকিস্তান আমলেই পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের সংঘাত পরিষ্কার লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের মানুষ এবং আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্যে লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা পাকিস্তানের বিপক্ষে সবসময় ভারতকে সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা অন্য দুই প্রধান দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সাবেক সরকারগুলো স¤পর্কে এমন দাবী করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও তারা ভারতের সঙ্গে স¤পর্কের কারণে শেখ হাসিনার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
আর স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিলো সাড়ে ৬ কোটি। আজকে দেশটির নাগরিক সংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি। যার আরেক অর্থ হলো শেখ মুজিব এবং তার দল বাংলাদেশের জন্য যে ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করেছে তা বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ বাংলাদেশী জানে না। সেদিন ভারতের সঙ্গে স¤পর্কের কারণে সাহায্য দিতে অস্বীকার করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রধান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার। অথচ আজ বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষকে সেই ত্যাগের ইতিহাস আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিৎ।
মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময় বলে চিহ্নিত করে। এশিয়ান নিক্কেই রিভিউ বলছে, দেশটি সকল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখেও অবিশ্বাস্য অগ্রগতি করছে। দেশটি আজ খাদ্যে স্বয়ং স¤পূর্ণ এবং আর্থিক উন্নয়নে সাড়া বিশ্বের প্রশংসার দাবীদার। এমনকি খোদ পাকিস্তান আজ বাংলাদেশের মতো আর্থিক সফলতা অর্জনের আগ্রহ প্রকাশ করছে। যার মাধ্যমে দেশটি স্বীকার করেছে আজ তারা বাংলাদেশের চাইতে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের জন্য নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার। এই বাণিজ্যে ভারতের উদ্বৃত্ব ৯শ কোটি ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ মাত্র ১শ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আমাদের কাছ থেকে ৭০ হাজার কোটি রূপির পণ্য ক্রয় করে। এই বাণিজ্য ভারতে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। শুধু এই কারণেই দেশটি ভারতের চির কৃতজ্ঞতা পেতে পারে। ২০১৭ সালেই ২ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসার জন্যে আসে। বর্তমানে এই সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরো বেড়েছে। এই বাংলাদেশীরা পরিবার সহ আসেন, ফলে তারাও কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রাখছেন। ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এই অবদান দেশটির বাড়তি আর্থিক সক্ষমতার জানান দিচ্ছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান