দুধ বাজারজাতে নিষেধাজ্ঞা ডেইরি শিল্পের জন্য আত্মঘাতি, বললেন সংশ্লিষ্টরা
স্বপ্না চক্রবর্তী : অন্যান্য শিল্পের মতোই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিকাশ ঘটেছে দেশীয় ডেইরি শিল্পেরও। ৫ বছর আগে এ শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো মাত্র ২৯ লাখ মেট্রিক টন। ৫ বছরের ব্যবধানে এ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৯৪ লাখ মেট্রিক টনে। একটি উদীয়মান শিল্প দুধ বাজারজাত বন্ধের নির্দেশ দেশের অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতি উল্লেখ করে দুধে বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিক এবং সীসা দূর করতে কোম্পানিগুলোকে কিছু সময় দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, কোম্পানিগুলোর উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে একটি শিল্পকে ধ্বংস করা হোক আমরা কেউই চাই না। কোম্পানিগুলোকে নিজেদের শোধরানোর জন্য কিছুটা সময় দেয়া উচিত। এদিকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর পরই নিজেদের অনুমোদন দেয়া ১৪ কোম্পানির দুধ বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে বিশেষ টিম মাঠে নামিয়েছে বিএসটিআই। বিএসটিআইয়ের পরিচালক ইসাহাক আলী বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা আমাদের মানদ-ে নাই। তাই আমাদের ল্যাবে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়নি। অন্যান্য ল্যাবরেটরিগুলোতে ক্ষতিকারক এ উপাদান পাওয়া গিয়েছে এবং হাইকোর্ট এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন সেহেতু এই কোম্পানির দুধগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে আমাদের ২টি বিশেষ টিম মাঠে কাজ করছে।
পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণন পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন তা সোমবার আট সপ্তাহের জন্য শুধু মিল্কভিটার ক্ষেত্রে স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। পরে মিল্কভিটার পক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আপিল বিভাগ এ আদেশের কার্যকারিতা আট সপ্তাহের জন্য করেছেন। তবে এ আদেশটি শুধু মিল্কভিটার জন্য প্রযোজ্য হবে।
বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র মনে করছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, যদি কোনো দুধে ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায় তাহলে কোম্পানিকে তা দূর করে বাজারজাত করার সুযোগ দেয়ার বদলে তা পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেয়া অনৈতিক। এদিকে আবার শুধু মিল্কভিটাকে বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যে কোম্পানিটি ৫৫ শতাংশ সরকারি মালিকানার। আমরা মনে করছি একটি বিশেষ মহল গুড়ো দুধের আমদানিকারকদের উৎসাহ দিতেই এমনটি করছে।
তিনি জানান, আমাদের দেশে প্রতিদিন দুধের চাহিদা ৮ লক্ষ লিটার। এই হিসাবে এক দিনে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয়। ৭ দিনে এই ক্ষতি প্রায় ২১ কোটি টাকা। তাহলে পাঁচ সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর বিক্রি বন্ধ থাকবে প্রায় ১০৫ কোটি টাকার দুধ। এতে করে কোম্পানিগুলো তো ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে খামারিরা।
তবে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ডেইরিকে একটি শিল্প মনে করি। কিন্তু কোম্পানিগুলো এটিকে ব্যবসা মনে করছে। দুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি ভোগ্যপণ্যে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে কোম্পানিগুলো এই ব্যবসা ছয় মাস করতে না পারলে অন্য কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু খামারিরা কি করবে?
দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়ার খবরে দুধ বিক্রি এমনিতেই কমেছে। দুই বড় কোম্পানি প্রাণ ডেইরি ও আড়ং বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ রাখবে। তবে তাদের খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক ডেইরির পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সীসা বা অ্যান্টিবায়োটিক যদি থাকে, সেটার উৎস আগে খুঁজে বের করা উচিত। কোম্পানিগুলো তো আর পয়সা খরচ করে সীসা বা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে দুধে মেশাবে না। এর উৎস হতে পারে গরুর খাবার, ওষুধ, মাটি ও পানি। তাই উৎস কোথায়, সেটা বের করে সমাধানের সময় দেয়া উচিত। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান