ফেরিতে স্কুল ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিট
নূর মোহাম্মদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ: ফেরিতে স্কুল ছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর ম-ল ও ফেরীর ম্যানেজারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। একইসঙ্গে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটে যুগ্মসচিবের অপেক্ষায় প্রায় তিনঘণ্টা ফেরি না ছাড়ায় তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও তার পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। এছাড়া ফেরি ঘাটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল নিশ্চিত করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আজ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানান রিট আবেদনকারী।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তদন্ত কমিটির প্রধান মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানসহ কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত রয়েছেন। তারা সে রাতে ঘাট এলাকায় কর্তব্যরতদের সাথে কথা বলেন।
জানা গেছে, শিবচরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে পারাপারের জন্য রয়েছে ৮৭ টি লঞ্চ, ২ শতাধিক স্পিডবোট ও ১৮ টি ফেরি। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে থাকায় বর্তমানে রোরো, ডাম্প ও কেটাইপ মিলিয়ে চলছে মাত্র ১১টি ফেরি। তবে ফেরি ঘাটের তথ্য জানতে কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাটের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করলে পরস্পর বিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, সেদিন সকালে মাদারীপুরে একটি মিটিং যাই। বিকেল চারটায় ঘাটে ফিরে এসে রাত ৮ পর্যন্ত থাকি। এর মধ্যে অসুস্থবোধ করলে রাত্রিকালীন দায়িত্বের জন্য উচ্চমান সহকারী মো. ফিরোজের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই। তবে একজন ভিআইপি আসবেন, যে ফেরি থাকবে তাতে তাকে পার করতে হবে এই তথ্য ফিরোজ হোসেনকে দিয়ে চলে যাই। ওই সময় কোন মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘাটে এসেছে এমন তথ্য আমাকে কেউ দেয় নি। ঘাটে যে দায়িত্বে ছিল, সে আমাকে জানালে অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত পার করা হতো।
তবে ওই সময় দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাটের উচ্চমান সহকারী ফিরোজ হোসেন বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল কাঁঠালবাড়ী ২ নং ফেরি ঘাটে। ঘাটের ম্যানেজার একজন ভিআইপি আসছেন এমন তথ্য দিলে আমি ১ নং ফেরি ঘাট দিয়ে পার হতে বলি। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ওই রোগীর কথা আমাকে কেউ বলেনি।
তিনি আরও বলেন, যখন অসুস্থ রোগীর কথা শুনতে পাই, তখন রাত সোয়া ১০টার মতো বাজে। বিষয়টা ম্যানেজার সালাম মিয়াকে জানাই। এবং আমি ওই ঘাটে এসে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরিতে উঠার ব্যবস্থা করি। ওই সময়ই ভিআইপি গাড়িটিও চলে আসে। এরপরই ফেরি ঘাট ছেড়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ওই সময় বিকল্প কোন ফেরিতে পার করা যেতো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মো.ফিরোজ হোসেন বলেন, অন্যঘাট দিয়ে দশটার কিছু সময় আগে একটি ফেরি ছেড়ে যায়। বিষয়টি সাথে সাথে জানলে কোন ব্যবস্থা করা যেতো। তাৎক্ষণিক জানতে পারলে ভিআইপির পরিবর্তে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য পরিবহন নিয়েই ফেরিটি ছেড়ে দিতাম। তবে আমি যখনই জেনেছি, তখনই ফেরিটিকে ছাড়ার ব্যবস্থা করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাট সংশ্লিষ্ট দোকানের কর্মচারীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান,’অ্যাম্বলেন্সে রোগী নিয়ে এসে ঘাটের সিরিয়ালে আটকা পরে ওই পরিবারটি। তারা খুব কান্নাকাটি করছিল ফেরিতে গাড়ি উঠানোর জন্য। তবে অনেক পরে তাদের নিয়ে ফেরিটি ছেড়ে যেতে দেখা যায়।