সেচে পানি সাশ্রয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই’ পদ্ধতি জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা চলছে
আবুল বাশার
বাংলাদেশের সব জনগণকে গুণগত মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে রচিত মহান সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন’ মর্মে অঙ্গীকার করা হয়েছে।
সেচে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে ‘ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই’ পদ্ধতি, সঠিক মানের ক্যাপাসিটর স্থাপন, অফ-পিক আওয়ারে সেচকাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার ইত্যাদি জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এজন্য লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও মোটিভেশন সভা করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় সমন্বয় সভায় আলোচনা ও কৃষি বিভাগের ব�ক সুপারভাইজারদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) কোনো ধরনের হিটার, ওভেন, ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিং মেশিন, ইস্ত্রির দোকান, পানির পাম্প ইত্যাদি চালানো বন্ধ করার জন্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেচপাম্পগুলোয় রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই সময়ে সব সেচপাম্প চালু রাখার জন্য গ্রাহককে উৎসাহিত করতে হবে। সেচ মৌসুমে সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য সদর দপ্তর থেকে জোনাল অফিস, সাব-জোনাল অফিসের জন্য কমিটি গঠন করে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি বাস্তুবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে উপজেলাভিত্তিক শতভাগ এলাকা পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮৬টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৭৩টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা আরো ৭৯টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হবে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে ১২৩টি উপজেলায় দ্রæততার সঙ্গে সংযোগ দিতে পারব। বাকিগুলোও দ্রæততার সঙ্গে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি নির্ভর করে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে যারা মালামাল সরবরাহ করছেন, বিশেষ করে খুঁটি ও তার সরবরাহ করছেন, তাদের ওপর। তাদের দ্রæত কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ যাতে সব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য গৃহীত পরিকল্পনা দ্রæত বাস্তুবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫০ হাজার কিলোমিটার লাইন এবং ১৯৮টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করে ১ হাজার ৫৫০ এমভিএ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ৩০ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান করা হবে। এজন্য প্রায় ৪১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৮টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। এগুলোয় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন তো রয়েছেই, পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থাও এজন্য বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
গ্রাহক হয়রানি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি উন্নত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল পরিকল্পনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব ধরনের গ্রাহকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য গৃহীত সার্বিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তুবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব শ্রেণীর গ্রাহকের মন্তব্য শুনে সে অনুযায়ী যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। গ্রামীণ জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই এ কার্যক্রমের সূচনা করা হয়েছিল। সে হাসি যাতে ¤øান হয়ে না যায়, সেদিকে আমাদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সততা ও উত্তম গ্রাহকসেবা বজায় রাখতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিআরইবি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিতরণ ব্যবস্থা দ্রæত সম্প্রসারণের জন্য সেরা সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করেছে। শতভাগ এডিপি বাস্তুবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেছে। কারণ এ সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ নতুন সংযোগ, ৫৫ হাজার কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ, ৪৯টি নতুন উপকেন্দ্র স্থাপন ও ৭৮টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতাবর্ধনের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৮০০ এমভিএ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিস্টেম লস ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা, বকেয়া মাসের পরিমাণ ১ দশমিক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ই-জিপির মাধ্যমে শতভাগ ক্রয়কার্য সম্পাদন ও ৪৪টি পবিসের পরিপূর্ণ আইএসও সার্টিফিকেট অর্জন হয়েছে। এসব সাফল্য ধরে রাখতে চাই। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ এবং ২ হাজার এমভিএ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রায় ৩৯ লাখ নতুন সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে ১৪৫টি উজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার। এছাড়া ৮০টি সমিতিতে জিআইএস বাস্তুবায়ন করা ও ডিজিটাল কেন্দ্রের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সহায়তায় বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। এগুলোকে আরো বেগবান করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।