দেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হতে পারে ওষুধশিল্প
মতিনুজ্জামান মিটু : দেশের ওষুধ শিল্প একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বার্ষিক জিডিপিতে এখাতের অবদান ছিলো শতকরা প্রায় এক দশমিক ৮৫ ভাগ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রকল্প পরিচালক ড. মো. হোসেন সোহরাব জানান, স্থানীয় ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিসহ দেশি কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরিণ চাহিদার শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ উৎপাদন করছে। একই সঙ্গে রপ্তানিযোগ্য ওষুধের ক্ষেত্রেও দ্রুত বিস্তার লাভ করছে দেশের এ শিল্প খাত। এধারা অব্যাহত থাকলে এই শিল্প খাত হবে দেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রায় ৮০ ভাগই পূরণ হয় আমদানি করে। যার ২০-২৫ ভাগই মেধাস্বত্ত্বের বেড়াজালে সুরক্ষিত। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে প্রায় ৪ হাজার ২১৭ কোটি টাকার বেশি ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে। বর্তমানের হিসেবে আমদানির অংক আরও অনেক বড়। ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী এসব ওষুধ পণ্যের আমদানি মাত্র ১০ ভাগ কমলে দেশের ওষুধ শিল্পখাতে সাশ্রয় হতো ৪২১ কোটি টাকা। ট্রেড-রিলেটেড এসপেক্টস অফ ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস) ফেজ শেষে মেধাস্বত্ত্বকরা এপিআইএস কেনা এবং রয়ালটি পরিশোধের জন্য এর দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে দেশে এ খাতের কাঁচামাল সংশ্লেষণ বা উৎপাদন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা গেলে খরচ কমবে ও জনগণ সুফল পাবে।
তিনি ্আরও জানান, দেশের স্থানীয় বাজারে ১৪শটির বেশি জেনেরিক ড্রাগ বাজারজাত হচ্ছে। এদের একটিও দেশে উদ্ভাবিত নয়। অথচ ঔষধি উদ্ভিদ, ছত্রাক, লাইকেন, সামুদ্রিক আগাছা ও ষ্পঞ্জসহ ঔষধ উদ্ভাবনের সহজলভ্য অনেক রিসোর্স বা উৎস দেশে রয়েছে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে নতুন ঔষধ উদ্ভাবনে গবেষণা করার সুবিধা হবে। এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ওষুধ আবিস্কার হলে মেধাস্বত্ত্ব অর্জন ও রয়ালটিতে বিপুল অর্থ আয় হবে। আবিষ্কার করা বাজারজাত ওষুধ ইনোভেটর ড্রাগ নামে পরিচিত। আর ইনোভেটর ড্রাগের অবিকল ওষুধ জেনেরিক ড্রাগ। ইনোভেটর ড্রাগের উদ্ভাবন ব্যয়বহুল এবং এর দাম জেনেরিক ড্রাগ থেকে অনেক বেশি। জেনেরিক ড্রাগকে ইনোভেটর ড্রাগের মতো নিরাপদ, কার্যকরী ও মানসম্মত হতে হয়। যা শুধুমাত্র বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজের মাধ্যমেই নির্ণয় করা যায়। ওষুধের কার্যকরি উপাদানের (এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিকাল ইনগ্রিডেন্ট) সঙ্গে আরও কিছু উপাদান (এক্সিপিয়েন্ট) মিশিয়ে ওষুধ তৈরি হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে সরবরাহকরা এসব উপাদান অনেকক্ষেত্রে জেনেরিক ড্রাগকে ইনোভেটর ড্রাগ থেকে নি¤œমানের করে তুলতে পারে। দেশের স্থানীয় বাজার মূলত জেনেরিক ড্রাগের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশে এই বায়োইকুভ্যালেন্স পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই, যা উন্নত দেশে ওষুধ রপ্তানির জন্য অত্যন্ত জরুরি। দেশের জেনেরিক ড্রাগ রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলো প্রতি ওষুধের জন্য ৪০-১৬০ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপ ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বায়োইকুভ্যালেন্স পরীক্ষা করে আনা হয়।
তিনি জানান, বিশ্বে প্রায় ১১২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের জেনেরিক ড্রাগের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ মাত্র দশমিক ০৮১ ইউএস ডলারের অংশীদার। ফলে বিশ্বের অন্যতম ঔষধি পণ্য রপ্তানিকারক দেশের স্বীকৃতির অর্জনে বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজের সুবিধা তৈরি করা দরকার বাংলাদেশকে। বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজের সুবিধা তৈরি হলে স্থানীয় জনগণকে সাশ্রয়ী দামে নিরাপদ, কার্যকরি ও মানসম্মত ওষুধ পেতে সহায়তা করবে। এই বিবেচনায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ওষুধ শিল্পের গুরুত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে বিসিএসআইআর ‘ইনস্টিটিউট অব বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সেস প্রতিষ্ঠা করছে। সম্পাদনা : সমীরণ রায় ও রেজাউল আহসান