৩৭০ ধারা বাতিল, ‘বিশেষ মর্যাদা’ হারালো জম্মু-কাশ্মীর
লিহান লিমা : জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে ভারত। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় এই ঘোষণা দেয়ার পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ওই বিলে স্বাক্ষর করায় জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হলো। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভায় জানান, জম্মু ও কাশ্মীর ‘পুনর্গঠিত’ হবে। রাজ্যটি দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হবে, একটি জম্মু ও কাশ্মীরে, অন্যটি লাদাখে। এই বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, কংগ্রেস ও জেডি(ইউ)। পক্ষে ছিলো বিজেপি, ওয়াইএসআরসিপি, বিএসপি, টিআরএস ও এএপি। এনডিটিভি, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস।
গত ৬৫ বছর ধরে বলা থাকা ৩৭০ ধারার আওতায় প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক বিষয় ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার পেতো। কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান, ভিন্ন পতাকা ছিলো। ৩৭০ ধারা বিলোপের আগে কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যে কোনও নীতি বা সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের আইনসভার অনুমতি নিতে হত। সংবিধানের এই ধারার অবলুপ্তি ঘটায় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবসান হলো। জম্মু ও কাশ্মীরকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। লাদাখ ও কাশ্মীরে দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে কাশ্মীরে আইনসভা থাকবে। কিন্তু লাদাখে আইনসভা থাকবে না, এটি ইউনিয়ন টেরিটরি হিসাবে পরিচালিত হবে।
ভারতের পার্লামেন্টে এই ঘোষণা দেয়ার পূূর্বে গৃহবন্দি করে রাখা হয় রাজ্যের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে। সাবেক বিধায়ক সাজ্জাদ লোনসহ এছাড়া একাধিক শীর্ষনেতা গৃহবন্দি হয়েছেন। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি ও কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ। রোববার রাতে গভীর রাতে বৈঠকে বসেন জম্মু ও কাশ্মীরের গর্ভনর সত্যপাল। উপত্যকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় । অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা হয়েছে কারফিউ। জম্মু ও কাশ্মীরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব রকম জমায়েতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিসেবা। রাজ্যটিতে মোট ৪৩ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গতকালই মোতায়েন করা হয় ৮ হাজার সেনা। আরো সেনা মোতায়েন ও নিরাপত্তা জোরদারের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশে সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দিল্লিতে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। কেন্দ্রে চলছে একের পর এক বৈঠক। গেস্ট হাউসগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর সরকার রাজ্যে আসা সব পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। তখনই কড়া নিরাপত্তা ও থমথমে পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিলের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সম্পাদনা : ইকবাল খান