বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, ঘণ্টায় ৮৬ রোগী ভর্তি
ফাতেমা আহমেদ : সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৫৯ জন। সোমবার ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সারাবাংলা, বিডিনিউজ, আরটিভি অনলাইন, বাংলানিউজ
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভর্তি হয়েছেন ৯০৬ জন। এছাড়া, প্রতিবেদনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে ১৮ জন। এ বছর ২৭ হাজার ৪৩৭ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন ও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৭ হাজার ৬৫৮ জন। এছাড়া, ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে ঢাকায় ৭ হাজার ২৯৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৮৬৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ১৮৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৯৮ জন ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩২ জন, বারডেম হাসপাতালে ২৬ জন, বিএসএমএমইউতে ৫০ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৮ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪০৮ জন রোগী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪ জন, ধানমন্ডি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ২৪ জন, ধানমন্ডি কমফোর্ট নার্সিংয়ে ৪ জন, শমরিতা হাসপাতালে ১১ জন, ল্যাব এইড হাসপাতালে ৯ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২২ জন, হাই কেয়ার হাসপাতালে ৮ জন, হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে ৬ জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও খিদমা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৭ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ২৪ জন, আদ-দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডে ৮ জন, আজগর আলী হাসপাতালে ২৬ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১০ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৩ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া, ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ২২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮০ জন ও খুলনা বিভাগে ১৫০ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও রংপুর বিভাগে ৪৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৯ জন, সিলেট বিভাগে ৩৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, ঠিক এক মাস আগে (৪ জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন ভর্তি হয়েছিলো। তার ঠিক এক মাস পর ৪ আগস্ট ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৮৬ জনেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে এতো সংখ্যক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শুধু হাসপাতালের ইনডোরে ভর্তি রোগীই নয়, হাসপাতালের আউটডোরেও জ্বরাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বাইরেও দেশের প্রায় সব জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে, দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। এরমধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল।
এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জুনে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ার পর থেকেই এনএস১ কিটের দাম বাড়তে থাকে, ১২০ টাকার কিট এখন ৪৫০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার জন্য এই হাসপাতালগুলোকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। তারা বলছেন, কিটের দাম বৃদ্ধি এবং সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার দাম বেঁধে দেয়ায় অনেক হাসপাতাল ইচ্ছা করে এই পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গুর পরীক্ষা না করাতে।
জ্বরের দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে চিকিৎসকের কাছে গেলে ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা বের করতে ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করতে দেয়া হয়। এই পরীক্ষার জন্য দরকার হয় এনএস১ কিট। এরপরে গেলে আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা দেয়া হয়। কারণ এই সময়ে এনএস১ কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু থাকা সত্ত্বেও তা শনাক্ত হয় না।
টানা দেড় মাসের মতো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ নিয়ে জনমনে আতঙ্কের কারণে ঢাকার সব হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার হিড়িক পড়ে। এই সুযোগে অতিরিক্ত ফি নেয়ার অভিযোগ ওঠে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। গত মাসে ডেঙ্গুর টেস্টের জন্য ফি বেঁধে দেয় সরকার-ডেঙ্গু এনএস১ এর জন্য ৫০০ টাকা এবং আইজিজি ও আইজিএম-দুটোর জন্যে ৫০০ টাকা।
এখন কিট সংকটের কথা জানিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষাই বন্ধ রাখছে অনেক হাসপাতাল।
এক মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট আমদানিকারক বলেন, ‘হঠাৎ এনএস১ কিটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে প্রাথমিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। চীন থেকে পণ্যটি আনতেও কয়েক দিন সময় লাগে। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরও একটি পণ্য যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে তিন দিন লাগে। এখন যদি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই কিট ছাড়পত্র পায় তাহলে সঙ্কট কিছুটা কমবে।’
কিট সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তা আমদানির উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক কোটি ৬১ লাখ এনএস১, আইজিজি ও আজিএম কিট আমদানির দ্বার উন্মুক্ত করেছে সরকার। এর কিছু অংশ চলতি আগস্টের শুরু থেকেই আসা শুরু হয়েছে।