মামলার জট নিরাসনে পথ দেখাচ্ছে গ্রাম আদালত
ইয়াছির আরাফাত : ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালত চালু করে সরকার। উচ্চ আদালতে মামলার জট নিরসন এবং অল্প সময়ে স্বল্প খরচে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিচার প্রাপ্তিতে সুবিধা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলানিউজ
সুফলও মিলেছে সরকারি এ উদ্যোগের। দেশের উচ্চ আদালতগুলোতে যেখানে মামলার জট বেড়েই চলেছে সেখানে প্রায় শতভাগ মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলার জট নিরসনে পথ দেখাচ্ছে গ্রাম আদালত। শুধু চট্টগ্রামেই গ্রাম আদালতে গত দুই বছরে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৯৪ ভাগ।
দেশের ২৭ জেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, সন্দ্বীপ এবং সীতাকু- উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে মামলা দায়ের হয়েছে ৩২১৪টি। যার মধ্যে ৩৩২টি মামলা জেলা আদালত থেকে গ্রাম আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে দুই বছরে মোট ৩ হাজার ৩৫টি মামলা নিস্পত্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রাম আদালতের ১ হাজার ৮২০ সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ হাজার ৪৬১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।
মামলা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ছাড়াও গ্রাম আদালতে মাধ্যমে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের ১৮৯ শতাংশ জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এ ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদগুলো ৪০ হাজার টাকা ফি আদায় করতে পেরেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি হয় গ্রাম আদালতে। নিজ নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আবেদনকারী ও প্রতিবাদকারী মনোনিু ২ জন করে ৪ জন প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় এ আদালত।
গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে সভা আহ্বান করা হয়। সভায় আবেদনকারী ও প্রতিবাদকারী উভয় পক্ষের মধ্যে আপসের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। এতে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে এবং সহজে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ থাকায় দিনে দিনে ভরসা বাড়ছে এ আদালতে।
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, সরকারি সেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন, গ্রাম আদালত তার একটি। এর মাধ্যমে গ্রামের লোকজন তার এলাকাতেই নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি মানুষের অধিকার। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনেও মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ কারণে গ্রাম আদালতকে সক্রিয় এবং কার্যকর রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রাম আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দেশের উচ্চ আদালতগুলোতে যেখানে একটি মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকছে, সেখানে গ্রাম আদালতে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। আশা করি মামলার জট নিরসনে গ্রাম আদালত অন্যদের পথ দেখাবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান