চামড়ার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি?
রবিউল আলম
বাংলাদেশের দ্বিতীয় রপ্তানি খাত চামড়া শিল্প। চামড়া শিল্প উন্নয়নে সরকারের একাধিক পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে হেমায়েতপুরে আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ট্যানারি শিল্পের মালিকরা বলছেন, ইটিবি সম্পূর্ণ না হওয়ায় চামড়া রপ্তানির সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার বলছে, এখনো আশানুরূপ শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেনি। ২০১৮-১৯ সালের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৮৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার, অর্জিত হয়েছে ১৬৪ ইউএস মিলিয়ন ডলার। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ধরা হয়েছিলো ১১২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার, অর্জিত হয়েছে ১০১৯ ইউএস ডলার। চলতি বছর কী হবে, এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই। ৬ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণী সভায় মাননীয় মন্ত্রী টিপু মুনশি ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রস্তাব করেন, কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণের। উত্তরে এ বছর চামড়ার মূল্য নির্ধারণে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে পাঁচ টাকা কমিয়ে নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। মন্ত্রী মহোদয় নতুন দায়িত্ব নেয়ায় চামড়ার মূল্য কমিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে চান না। সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানি সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মালিকরা নীরবে প্রস্তাব মেনে নেন। আমার আশঙ্কা, চামড়ার দাম কতো তা বড় বিষয় নয়, চামড়া ক্রয় করবে কে?
ট্যানারি মালিকরা বলছেন টাকা নেই, আমরা যারা কাঁচা চামড়া ক্রয় করি, তাদের আড়তদাররা টাকা দিচ্ছেন না। আড়তদার বলছে, ট্যানারি মালিকরা কোটি কোটি টাকা আটক করে রেখেছেন। সরকার ১৮শ কোটি টাকার চামড়া ক্রয়ের জন্য ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। টাকা কোথায় যায়, ট্যানারি শিল্প আশানুরূপ হয়নি, শিল্পে পুঁজি নেই, সরকারের দেয়া টাকা নেই, আড়তদার ফড়িয়াদের টাকা দেয়া হয়নি, ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে না, টাকাও থাকছে না, টাকা সব যায় কোথায়? অনেক ট্যানারি মালিক আক্ষেপ করে বলছেন, আমরা যারা নিয়মিত ব্যবসা করছি, টাকার অভাব অনুভব করছি, যারা টাকা পাচার করে তাদেরও টাকার অভাব হয় না। ইতোমধ্যে ক্রিসেন্ট ট্যানারির মালিক ১২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও। আরও অনেকেই আছে যারা আত্মগোপনে যাওয়ার অপেক্ষায়। চামড়া শিল্প ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কি সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে না? নাকি চামড়া শিল্পের মালিকদের কাছে সরকার জিম্মি, বোঝা যাচ্ছে না। সরকার টাকা দেয়, টাকা যায় কোথায়, খবর রাখার দায়িত্বে কে থাকে? হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে চামড়া শিল্পের আকজের এই করুণদশা দেখতে হচ্ছে আমাদের। সভায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলেন ট্যানারি মালিকদের কাছে, কোরবানির চামড়া আপনারা যদি ক্রয় করতে না পারেন, তবে আমি কেন রাত জেগে চামড়া পাহারা দিয়ে অসহায় কাঁচা চামড়াওয়ালাদের ঢাকামুখী করবো? বাণিজ্য সচিব প্রশ্নটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বলেন, এক্ষেত্রে সরকার কাঁচা চামড়া ক্রয় করার অনুমতি দেয়ার চিন্তা করতে পারে। সচিব বলেন, আপনারা চামড়া ক্রয় করতে পারবেন না, রপ্তানি করতে পারবেন, বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন না। সরকার চামড়ার পাহাড় দেবে, গরিব মানুষকে বাধ্য করা সরকারের দায়িত্ব নয়। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এ সময় কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি চান। ভাবনার বিষয় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, এতিমখানা, মাদ্রাসা ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কী হবে? ছাগলের অর্ধেক চামড়া পচে যাবে। যখন ট্যানারি শিল্প রপ্তানির উপযুক্ত হবে চামড়া পাবে কোথায়? জিম্মি করে ব্যবসা হয়? ব্যবসায় স্বচ্ছতা থাকতে হয়। এই কথা ট্যানারি শিল্পের মালিকদের কেউ বোঝাতে পারবেন কী? লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি