বিনিয়োগ কাশ্মীরে শান্তি ফেরাবে না, বøুমবার্গকে মিহির শর্মা
নূর মাজিদ : ভারত সরকার একতরফা সিল লাগিয়ে ৭০ বছর ধরে বিরাজমান কাশ্মীরের স্ব-শাসনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটুকুও কেড়ে নিয়েছে। যুক্ত করেছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে, যার সার্বিক তত্ত¡াবধানের ভার নিজের হাতে রেখেছে নয়াদিলি¬। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিলো নরেন্দ্র মোদীর ডানহাতখ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। হিন্দু জাগরণের নব-প্রেরনার বলি হিসেবেই অমিত, মোদী ও তাদের দল বিজেপি কাশ্মীরকে বেছে নিয়েছে। বøুমবার্গে লেখা এক উপ-স¤পাদকীয়তে ভারতের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং স¤পাদক মিহির শর্মা এসব কথা বলেন। উপ-স¤পাদকীয়তে ভারতের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং স¤পাদক মিহির শর্মা বলেন, আসল উদ্দেশ্য যাই হোক মুখে কিন্তু তারা সকলেই কেবল উন্নতির কথা বলেছেন। অমিত শাহ পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে কাশ্মীরের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার জন্যে উদ্দেশ্যকে উন্নতির চকচকে মোড়কে উপস্থাপন করেন। শাহের বক্তব্য, ‘রাজ্যে দুর্নীতি চরমাকার ধারণ করেছে, এই অবস্থায় কোন উন্নয়ন কাজ চলতে পারেনা। সেখানে কোন হাসপাতাল আছে? আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-নার্স? ভারতের কোন বিখ্যাত ডাক্তার চাইবেন সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দিতে? কেনই বা চাইবেন সেখানে তিনি নিরাপত্তা পাবেন না। পাবেন না জমি কিনতে বা বসবাস করতে। এমনকি তার সন্তানেরাও ভোটাধিকার পাবেন না।’ কিন্তু শাহের যুক্তিগুলোর মাঝে অনেক বড় ফাঁকি লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে আছে অনেক বড় এক পরিকল্পনা। বিষয়টিকে আমাদের খুবই গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিৎ। কারণ যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত শাহ দিয়েছেন তা আজকের ভারত এবং বহিঃবিশ্বের নানা হৃদয়বিদারক বাস্তবতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চলেছে। অনেক সময় এসব পরিকল্পনা জাতিগত বৈষম্যের চরম নির্বুদ্ধিতা এবং কুচক্রী ভাবনা থেকে প্রস্তাব করা হয়। যেমন ট্রা¤প জামাতা জ্যারেড কুশনারের প্রো-ইসরাইলি ভাবনার চরম নির্বুদ্ধিতা ৫ হাজার কোটি ডলারের মধ্যপ্রাচ্য ‘শান্তি পরিকল্পনা!’ আবার চীনের জিনজিয়াং এবং তিব্বতের উন্নতি নিয়ে দেয়া ভাষ্যগুলো স্বৈরশাসন জায়েজ করার কুচক্রী প্রক্রিয়া মাত্র।
এমন কথা বলার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। বাস্তবতা স¤পর্কে ওয়াকিবহাল কেউ বিশ্বাস করবেন না যে ফিলিস্তিন, জর্ডান, মিশর এবং লেবাননে ৫ হাজার কোটি ডলার শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এই কারণেই যখন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিফেন ন্যুচীন দাবি করলেন, যে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা শীঘ্রই আকর্ষণীয় আইপিওর মতো লোভনীয় হবে (বিনিয়োগ এবং ব্যবসার জন্যে), তখন সাধারণ বুদ্ধিমত্তার কেউই অট্টহাসি চেপে রাখতে পারেন নি। একইভাবে কেউকি বিশ্বাস করেন চীনা সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে জিনজিয়াংয়ের উইঘুররা উপকৃত হচ্ছেন? না করেন না। কারণ হান অভিবাসীরা এখন ওই অঞ্চলের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। উইঘুরদের স্থান হয়েছে কন্সেন্ট্রেশন ক্যা¤েপ।
মোদী এবং শাহের বিজেপি সরকার এই দুই ধরনের কুচক্রী এবং নির্বোধ জাতি-বৈষম্য ও নির্মূলের পরিকল্পনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। তারা এমন ভান করছেন যেন বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন আগ্রাসী হতে পারে, সেই স¤পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। একইসঙ্গে, তারা কাশ্মীর নিয়ে যে সব কথা বলেছেন তা ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি বিদ্ধ করেছে। নয়াদিলি¬র শীর্ষ আমলা পর্যায়ের গোপন খবর যা গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে, তার সুত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাশ্মীরে বিনিয়োগ নিয়ে সরকারিভাবে সম্মেলন করা হবে। এই খবরের প্রতিধবনি কুশনারের প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো শোনায়। গত জুলাইয়ের ওই সম্মেলনে কোন ফিলিস্তিনি ছিলেন না। কারা ছিলেন সেটা খুবই বোধগম্য।
কাশ্মীরের বর্তমান অনিরাপদ পরিবেশে সেখানে কোন বিনিয়োগকারী আসতে আগ্রহী হবেন না। বিদেশীদের ক্ষেত্রে একথা আরো বেশি প্রযোজ্য। কিন্তু, এই বিনিয়োগের নাম করে কাশ্মীরের জমি দখল করা সেখানে অভিবাসী নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া এখন সংবিধানের মাধ্যমে সিদ্ধ করা হলো। আমি মনে করি, কাশ্মীরিরা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়ন করার ক্ষমতা রাখেন। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানব উন্নয়ন সূচকের চাইতে কাশ্মীর এগিয়ে। এমনকি শত সহিংসতা এবং দমনের মাঝেও মোদীর নিজ রাজ্য গুজরাটের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কাশ্মীর। রাজ্যটি আরো ভালো উন্নতি করতে পারত। পারেনা কারণ নিরাপত্তার নামে পুরো কাশ্মীরকে এক সামরিক জল¬াদখানায় পরিণত করা হয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান