ঈদের পর বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা
ফাতেমা আহমেদ : রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলেও ঢাকার বাইরে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে জানা যায়, এই ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৫ জন। ৬৪ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৮৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছেই না। বুধবার পাবনা ও মাদারীপুরে দুই ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। চ্যানেল আই অনলাইন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণকে সচেতন হয়ে নিজের বাড়িঘর এবং চারপাশ পরিষ্কার রেখে ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলা করতে হবে।
বুধবার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মাহফুজ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার চক রামানন্দপুর গ্রামে। মাহফুজের স্বজনরা জানান, ‘ভর্তি কোচিং করতে গিয়ে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় মাহফুজ। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার বিকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
এছাড়াও মাদারীপুরের শিবচরে মারা গেছেন আব্দুল মজিদ (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ। তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে শিবচরে নিয়ে আসা হয়। রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান।’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৪০ জন মারা গেছেন। তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
১৮ মাস বয়সী শিশু মেহরীমার ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ডেঙ্গু। সঙ্গে তার ৮ বছরের বোন মুনও ঈদের দিন থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত। দুই মেয়েকে নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন মা।
মুনের মতো পাঁচ মাস বয়সী নাফিসাও ডেঙ্গু জ্বরে হাসাপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪০ জন ভর্তি। বিএসএমএমইউ’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২২ জন।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৩ জন। এ নিয়ে ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭০ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পাশাপাশি জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।
রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারিসহ সারাদেশের প্রায় ৪০টি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৫৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪৭১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪১৪৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৭২৬ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বলেন, ‘ঈদের পরে ক্রিটিকাল ডেঙ্গু রোগীদের পাশাপাশি গায়ে অল্প জ্বর নিয়েও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আমরা যতই বলছি, যত পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনারা বাসাতেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেবেন, লক্ষণ দেখে তবেই হাসপাতালে আসবেন চিকিৎসা নিতে, লোকেরা শুনছে না। তারা আতঙ্কিত হয়ে কখন কি হয় এসব ভেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসও বৃষ্টির মৌসুম। আগামী সাত থেকে দশ দিন আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখবো। ঈদের ছুটিতে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি না হলেও পরে আবার তা বাড়তে পারে। তবে আপাততো আমরা বলছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে।’
তিনি জানান, স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ জানতে পারবেন রোগীরা।
বিগত বছরের হিসেবে ডেঙ্গুর পিকটাইম অপেক্ষা করছে সামনে। এদিকে ঈদের পরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই রোগীর চাপ সামলাতে অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক নার্স এনে ওই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দীন জানান, ‘এরই মধ্যে অতিরিক্ত নার্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু চিকিৎসকও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। গতকালই চালু হয়েছে শিশু আইসিইউ। ঢামেক কর্তৃপক্ষ বলছে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছিলো। কারন অনেকেই ঢাকার বাইরে চলে গেছিলেন। তবে রোগী বাড়ার চাপ রয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পর প্রতিটি পরিবারকে নিজ ঘরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সরকারের দেয়া তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে বাসায় ফিরেই সবার একসঙ্গে ঘরে ঢোকা উচিত হবে না। নির্দেশনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তি ঘরের মূল দরজা খুলে ঘরে ঢুকবেন এবং দরজা জানালা বন্ধ অবস্থায় ঘরের আনাচে কানাচে, পর্দার পেছনে, খাটের নীচে স্প্রে করবেন। কোনভাবেই ঘরে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের প্রথমে ঘরে ঢুকতে দেবেন না।
মশার স্প্রে ব্যবহারের পর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবেন ও আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন। আধা ঘণ্টা পর আবার ঘরে ঢুকে সকল দরজা জানালা খুলে দিবেন। কমোড ফ্ল্যাশ করবেন, বেসিনের কল ছেড়ে দেবেন। এরপর সবাই ঘরে ঢুকবেন। যাদের বাড়িতে মশা নিধনের স্প্রে নাই তাদেরকে বলা হয়েছে সবাই একসঙ্গে ঘরে না ঢুকে প্রথমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তি ঢুকে সকল দরজা জানালা খুলে দেবেন। ঘরের সব ফ্যান ছেড়ে দেবেন কমোড ফ্ল্যাশ করবেন, বেসিনের কল ছেড়ে দেবেন। আর অবশ্যই রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে যাবেন।