চামড়া শিল্পের বিকাশবিরোধী গোষ্ঠীর ‘কাঁচা’ চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে আগ্রহ বেশি, বললেন আনু মুহাম্মদ
আমিরুল ইসলাম : অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, কিছু গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে যারা চামড়া শিল্পের বিকাশ চায় না এবং কাঁচা চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ বেশি। তিনি বলেন, যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। চাহিদা এবং যোগান দিয়ে যদি চামড়ার দাম নির্ধারিত হতো তাহলে এ রকম অবস্থা হতো না। কারণ চামড়ার চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী চামড়ার দাম আরও বেশি হওয়ার কথা। কখনো যদি কোনো পণ্যের দাম বেশি পড়ে যায়, তাহলে দেখা যায় একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, একটা গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি করে দাম কমিয়ে কিছু লোক লাভবান হয় এবং তারা খুব সংগঠিত শক্তি থাকে। এই সংগঠিত শক্তি চামড়ার দাম কমানোর জন্য কয়েক বছর ধরেই কাজ করছে। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, চামড়ার কোনো চাহিদা নেই, তাই তারা চামড়া ক্রয় করবে না। এর ফলে চামড়ার দাম অবিশ্বাস্য রকম কমে গেছে। যেখানে চামড়া জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে সেখানে কাঁচামাল হিসেবে চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং এটা কিছু গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণেই হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যখন কিছু গোষ্ঠী বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তখন সেখানে দায়িত্বটা হচ্ছে সরকারের। যাতে গোষ্ঠীতন্ত্র, সিন্ডিকেট যেন বড় ধরনের ক্ষতি না করতে পারে সেটা দেখা। এ সময় সরকারের হস্তক্ষেপ করতে হয় এবং প্রয়োজন পড়লে নিজেদের কিনে নিতে হয়। কিনে নিয়ে দামটা ঠিক রাখতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে বোঝা যায় যে শক্তিশালী গোষ্ঠী কাঁচা চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট করছে, তাদের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী অংশের যোগসাজশ আছে। তা না হলে সরকারের এমন নিষ্ক্রিয় থাকার কথা নয়। আবার সরকার যখন সক্রিয় হলো এটাও বিস্ময়কর। কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার একদিনের মাথায় সরকার সিদ্ধান্ত দিলো ‘কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হবে’। এ রকম তড়িৎ সিদ্ধান্ত আমরা যেখানে প্রয়োজন সেখানে দেখি না। এ রকম সিদ্ধান্ত দেখে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যই এ পরিস্থিতি সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার নিষ্ক্রিয় ছিলো। এতে করে আমাদের দেশের চামড়া শিল্পের ক্ষেত্রে একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। ট্যানারি সরানোর ব্যাপারে সরকারের দাপ্তরিক সিদ্ধান্তে কাঁচা চামড়া রপ্তানির মতো দক্ষতা বা সক্রিয়তা দেখা যায়নি। ভারতে গো-হত্যা নিষিদ্ধ হলেও তাদের চামড়া শিল্প রয়েছে। কাঁচা চামড়া বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হলে ভারতের চামড়া শিল্পের জন্য ভালো হবে।