বেশির ভাগ রেমিট্যান্স আসছে মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ দেশ থেকে
ফাতেমা আহমেদ : দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। একই সঙ্গে রিজার্ভের পরিমাণও বাড়ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে নানা উদ্যোগে বৈধ পথে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। চ্যানেল আই অনলাইন, জাগো নিউজ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সিংহভাগই এসেছে মাত্র ৫টি দেশ থেকে। অর্থাৎ রেমিট্যান্সের ৬১ দশমিক ৮৪ শতাংশই এসেছে ৫ দেশ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বরাবরের মতো গেল অর্থবছরেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৩১১ কোটি ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ১৯ শতাংশ।
প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ৬টি হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অন্য দেশগুলো হচ্ছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত বছর (জুলাই-জুন) ৩১১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন সৌদি প্রবাসীরা। কিন্তু আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো ২৬০ কোটি ডলার। এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কুয়েত ও মালয়েশিয়া। এই সময় দেশগুলো থেকে যথাক্রমে ২৪০, ১৮৪, ১৪৬ ও ১২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
এর আগে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠান গত মে মাসে। যার পরিমাণ ছিলো ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স ছিলো মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিলো ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিলো ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলো প্রবাসীরা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এই প্রণোদনা দেয়ার কার্য়ক্রম শুরু হবে। এতে আশা করা হচ্ছে, পরের অর্থবছরগুলোতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে।