কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ভাবছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
মেরাজ মেভিজ : ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করলে দেশীয় শিল্পের স্বার্থে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, চাইলেও এখন কাঁচা চামড়া বা ওয়েট ব্লু রপ্তানি সম্ভব হবে না। সদ্য সমাপ্ত ঈদ উল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর হঠাৎ করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ঐ সিদ্ধান্তে অনড় থাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হলে আমরা হয়তো রপ্তানি করতে দিবো না। অন্যথায় কেস টু কেস ভিত্তিতে ওয়েট ব্লু (কাঁচা চামড়ার পশম ও ঝিল্লি ছাড়ানোর পর যে অংশ থাকে) রপ্তানির সিদ্ধান্ত থাকতে পারে।
তবে সরকার চাইলেও এখন ওয়েট ব্লু রপ্তানি সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, মন্ত্রণালয়ের রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেওয়ার দরকার ছিল অন্তত ছয় মাস আগে। কেননা রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরপরই কাঁচা চামড়া বা ওয়েট ব্লু রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। এজন্য ফাইটোসেনিটারিসহ বিভিন্ন রোগজীবাণুমুক্ত করার সনদ থাকতে হয়। এ পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে আমদানিকারক দেশের চাহিদার ওপর। সুতরাং চাইলেই এখন আড়তদারদের পক্ষে ওয়েট ব্লু রপ্তানি করা সম্ভব হবে না।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু সরাসরি বিদেশে রফতানি নিষিদ্ধ। চামড়া পণ্যের উৎপাদন এখনো পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকার ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে বাংলাদেশের চামড়ার বড়ো বাজার ছিল চীন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে চীনে এই চামড়া রপ্তানিতে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। কাঁচা চামড়া থেকে ওয়েট ব্লু তৈরি করলে তাতে মূল্য সংযোজন হয় মাত্র ১০ শতাংশ। কিন্তু ফিনিশড লেদারে এ মূল্য সংযোজিত হয় ৭০-৮০ শতাংশ।
এদিকে চামড়া রপ্তানির বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। মফিজুল ইসলাম বলেন, দেশীয় শিল্পের মালিকরা রপ্তানির বিপক্ষে। আমরাও স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ বিবেচনা করে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন দেখলাম দাম পড়ে গেছে। এখন চামড়া নষ্ট হওয়ার চাইতে যাতে দুইটা পয়সা আয় হয়, সেজন্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এ সম্পর্কে দিন কয়েক আগে লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) পক্ষ থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়েট ব্লু রপ্তানিতে বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক দিয়ে ক্ষতিগস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কাঁচা চামড়া থেকে ওয়েট ব্লু তৈরিতে বর্জ্য তৈরি হয় মূল উৎপাদন প্রক্রিয়ার ৭০-৮০ শতাংশ, যা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে। পরিবেশ রক্ষায় সিইটিপি নির্মাণ ও হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারের বিপুল বিনিয়োগের সুফল শিল্প মালিকদের বদলে মূলত ওয়েট ব্লু ক্রেতা দেশগুলোই ভোগ করবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। সম্পাদনা : ইকবাল খান