ট্যানারি মালিকরা তিন কিস্তিতে চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা পরিশোধে সম্মত
স্বপ্না চক্রবর্তী : ট্যানারি মালিকরা চামড়ার আড়তদারদের পাওনা প্রায় চারশ কোটি টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা আরো দুইটি বৈঠক করবেন। প্রথম বৈঠক হবে আগামীকাল ২৪ আগষ্ট শনিবার। এতে চূড়ান্ত করা হবে, কোন কোন কোম্পানির কাছে, কি পরিমাণ পাওনা টাকা রযেছে। আর দ্বিতীয় বৈঠকটি হবে আগামী ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার। দ্বিতীয় বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে কিভাবে পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে পুনরায় বৈঠকে এই পাওনা পরিশোধের অগ্রগতি জানানো হবে। বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের যে পাওনা রয়েছে, সেই পাওনা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ের বকেয়া অর্থ একটি কিস্তিতেত, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের বকেয়া আরেকটি কিস্তিতে এবং ২০১৫জানান সাল থেকে ২০১৯ সালের বকেয়া অন্য একটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, বৈঠকে সব পক্ষ একমত হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সমাধানের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে সারাদেশের ৮টি জেলা থেকে পাওনা টাকা পরিশোধেরে তালিকা আমরা বৃহস্পতিবার পেয়েছি। বাকিদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়াও বৈঠকে চামড়ার একটি নীতিমালা ও রোডম্যাপ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এটি উঠতে পারে। এছাড়াও সভায় হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প নগরী সাভাবে স্থানান্তরের পর জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের চামড়া পুঁতে ফেলা কিংবা নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা সারাদেশে হয়নি। কয়েকটি জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে পুনরায় না ঘটে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট কি না, এখনও বলতে পারছি না। আগামী ৩১ আগস্টের বৈঠকে আমরা বলতে পারব আমরা সন্তুষ্ট কি না। তবে আমরা আড়তদারদের বকেয়ার মধ্যে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের সম্পূর্ণ পাওনা টাকা আমরা সবার আগে দাবি করছি। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে বকেয়া রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক ট্যানারি মালিক ব্যবসা ঘুটিয়ে ফেলে অন্য ব্যবসায় চলে গেছেন। এটা কিভাবে পাবো তাও আলোচনা করতে হবে।
বৈঠক শেষে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট। এবার আমরা আগামী ২টি বৈঠকে নিজেরা বসে ঠিক করে নেব, পাওনাগুলো কবে, কিভাবে পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, এবার চামড়া কিনার জন্য আমরা মাত্র ৬০৫ কোটি টাকা পূর্ণতফসিল করা হয়েছে। আমরা যত টাকা বকেয়া পরিশোধ করিছি তত টাকা ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, আর নতুন ঋণ পেয়েছি মাত্র ১৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আমরা নতুন করে ঋণ দাবি করছি, চামড়া ক্রয় করার জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের টাকা আগে পরিশোধ করার কথা বলছি। চামড়ার দরপতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঠিকমত চামড়া কিনতে না পারার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার পিছনে কারা দায়ী এটা বলা সম্ভব না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এটা না হয় সেজন্য আমরা একমত হয়েছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ক্ষতি করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিরুদ্ধে। কারণ এটি করা হলে চামড়া শিল্পের ক্ষতি হবে।
এর আগে, আড়তদারদের পাওনা আদায়ে গত ১৮ আগস্ট সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে চামড়া কেনাবেচায় সম্মত হন চামড়া ব্যবসায়ীরা।