বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে অ্যামাজনে আগুন নেভাতে সেনা পাঠাচ্ছে ব্রাজিল
লিহান লিমা: বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়ে অ্যামাজনের আগুন নেভাতে সৈন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসানারো। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘অ্যামাজনের আগুন নেভানো আমাদের কর্তব্য।’ যদিও এর আগে বোলসানারো বলেছিলেন, ‘অ্যামাজনের আগুন ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি নিয়ে কারও নাক গলানো সহ্য করা হবে না।’ তিনি সমালোচনাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেন। ডেইলি মেইল, আনাদুলু, বিবিসি, সিএনএন।
১৫ আগস্ট থেকে ভয়াবহ আকারে জ্বলছে পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট অ্যামাজন। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ৭২ হাজারেরও বেশি অগ্নিকা-ের শিকার হয়েছে অ্যামাজন যা পূর্বের বছরের চাইতে ৮৩ গুণ বেশি। ইতোমধ্যেই পুড়ে গেছে সেখানকার সাত হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। মিনিটে পুড়ছে ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। এরপরই বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এটিকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ বলে উল্লেখ করেন। টুইটারে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ লেখেন, ‘পৃথিবীর ফুসফুস অ্যামাজন বিশ্বের বায়ুমন্ডলের ২০ ভাগ অক্সিজেন উৎপাদন করে। আমাদের বাড়িই পুড়ছে।’ গবেষকদের মতে, এই অরণ্য প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের এই সময়ে অক্সিজেন ও জীববৈচিত্রের অন্যতম উৎসের এই ক্ষতি বিশ্ব নিতে পারবে না। অবশ্যই অ্যামাজনকে সুরক্ষিত করতে হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বোলসানারোর কাছে অ্যামাজনের আগুন নেভাতে সহায়তা প্রস্তাব দেবেন।
কিছু কিছু দেশ আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে ব্রাজিলের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড বলেছে, তারা ব্রাজিলের সঙ্গে হতে যাওয়া বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আর সামনে আগাবে না। ফিনল্যান্ড ব্রাজিলের মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য ইউরোপিয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামাজনের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় আকারে আর্থিক অনুদান দেয়া জার্মানি ও নরওয়ে তহবিল স্থগিত করেছে। শুক্রবার ব্রাজিলের পরিবেশবাদী সংস্থাগুলো শহরজুড়ে বিক্ষোভ করে। এছাড়া লন্ডন, জেনেভা ও প্যারিসসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্রাজিলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। জি-৭ বৈঠকেও অ্যামাজন নিয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যেই ব্রাজিলের প্রতিবেশি দেশ বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে যৌথভাবে মার্কিন সুপার ট্যাংকার দিয়ে পানি ছিটিয়ে আমাজনের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে আগুন নিয়ন্ত্রণে অ্যামাজনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন বোলসানারো। তবে ঠিক কবে নাগাদ সেনা মোতায়েন করা হবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানান নি তিনি। এরআগে অ্যামাজনের সুরক্ষাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বলেছিলেন বোলসানারো। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের দাবি, আমাজনের এই আগুন ‘মনুষ্যসৃষ্ট’। অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর ঘটনা শুরু হয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান