রাত বাড়লেই শিবিরে ঘুরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা টহলদাররা
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ২০১৭ সালের ২৫ আগস্প মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমননিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির দিনের আলোয় শান্ত থাকলেও রাত নামলে হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর। কক্সবাজারে সরেজমিনে ঘুরে এসে বিবিসি বলছে, রাতের আঁধারে শিবিরগুলোর দূর্গমস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভয়ংকর সশস্ত্রদল। ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে হত্যাও করছে। এমনকি অনেক স্থানে অন্ধকার নামলে পুলিশ পর্যন্ত যায় না। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে পাহাড়া দিতে আছেন মাত্র ৯০০ পুলিশ। বিবিসি।
স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গারা বর্তমানে অনেক বেশি উগ্র ও হিং¯্র আচরণ করছেন। এমনকি তারা স্থানীয়দের ভয়ভীতি পর্যন্ত দেখাচ্ছেন। কোনো কোনো স্থানে স্থানীয়দের জমি দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা এমন অভিযোগও রয়েছে। আর স্থানীয়রা বলছেন, কিছু এনজিও’র মদদে তারা এতোটা দূর্বিনিত হওয়ার সাহস পেয়েছেন। আশ্রয় শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে বিবিসি জেনেছে, শিবিরের ভেতরে একটি অংশ আছে যাদের কাফের বা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সন্দেহ করে অপরপক্ষ। এসব ব্যক্তি এখনো শিবির থেকে মিয়ানমারের গোয়েন্দাদের তথ্য দেয় বলে তাদের প্রতিপক্ষের অভিযোগ। ক্যাম্পের ভেতরেই একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে যারা তাদের দৃষ্টিতে ‘কাফের’ চিহ্নিত করার কাজ করে। রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মুহাম্মদ ইউনুস বিবিসি প্রতিবেদককে বলেন, ‘যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের সবাই মোনাফেক। কোন ভালো মানুষকে হত্যা করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে অনেকে আছে যারা মিয়ানমার বাহিনীর কাছে ‘তথ্য পাচার’ করে। পুলিশ বলছে, ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে গত দুই বছরে অন্তত ৪৫টি খুন হয়েছে, যার বেশকিছু পরিকল্পিত হত্যাকা-।
সম্প্রতি সরকারি বাহিনী একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এই অস্ত্র রোহিঙ্গাদের জন্য অর্ডার দিয়েছিলো একটি এনজিও। এর আগেও বিভিন্ন এনজিও এই ধরণের দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করেছে। স্থানীয়রা আরো ভয়ঙ্কর তথ্য দিচ্ছেন। এটি মনে করার কোনো কারণ নেই, মিয়ানমারে গিয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে এভাবে সশস্ত্র হচ্ছে রোহিঙ্গারা। বরং এসব অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে তাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশীদের ভয়ভীতি দেখাতে। বরং স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গাদের স্বভূমে ফেরার কার্যত কোনো ইচ্ছেই নেই। কারণ বিনা পরিশ্রমে তারা বাংলাদেশে যেসব সুযোগ সুবিধা পান, মিয়ানমারে তা পাওয়া অসম্ভব। ২ বছর বিনা পরিশ্রমে জীবন ধারণের সকল সামগ্রী প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাওয়ায় রোহিঙ্গারা বেশ খানিকটা অলস হয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘শিবিরের ভেতরে একটা কথা প্রচলিত আছে, ক্যাম্প দিনের বেলায় বাংলাদেশের আর রাতের বেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর। এটা এখন ওপেন সিক্রেট।’ কর্মকর্তারা বলছেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী চায়না যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যেতে চায়। এর মাধ্যমে সেই সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে বলে মনে করেন সে কর্মকর্তা। সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবার পর সে গোষ্ঠী অনেক রোহিঙ্গাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে যাতে তারা ফিরে যেতে রাজী না নয়। স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে এনজিওগুলো বলছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ^াস করে। তবে এই বিশ^াস নিস্বার্থ নয়। যদি রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যায়, তবে পরিস্থিতি বদলাবে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের এই এনজিওগুলোকে প্রয়োজন বলেই তারা বিশ^াস করতে বাধ্য হয়। যদি সাহায্যের মাত্রা কমে আসে তাহলে অচিরেই এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের চক্ষুশূলে পরিণত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বেসরকারি সংস্থাগুলো এরই মধ্যে ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বেশি ত্রাণ সাহায্য দিচ্ছে বলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবার আগ্রহ পাচ্ছেনা। রোহিঙ্গাদের শুধু নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি নয়, রোহিঙ্গাদের হামলায় কয়েকজন বাংলাদেশীও নিহত হযয়েছে। সর্বশেষ একজন যুবলীগ নেতার হত্যাকা- স্থানীয় বাংলাদেশীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং ক্ষোভ তৈরি করেেেছ। সম্পাদনা : ইকবাল খান