ব্যবসায়ীদের পাশে আছি, ব্যবসা করতে আসিনি, বললেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বজিৎ দত্ত : সবসময়ই ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। ব্যবসায়ীদের সবরকম সহযোগিতা দিয়ে দেশ যেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয় সে ব্যবস্থাই সরকার করছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৬-১৭ বিতরণ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, রপ্তানি আরও বাড়াতে নতুন নতুন পণ্য সংযোজন এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের জন্য রপ্তানিকারকদের আহ্বান জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা যে পণ্যগুলো রপ্তানি করছি, সেখানে আমাদের নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে। পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। সেই সাথে পৃথিবীর কোন দেশে কোন জাতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি সে দিকটায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নতুন পণ্য, নতুন দেশ। এই নতুন দেশে নতুন পণ্য খুঁজে যাতে বের করতে পারি আর রপ্তানি করতে পারি, আমাদের বাজারটা যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২০২টি দেশে ৭৫০টি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৪৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০১৯ এর হিসাবে বাংলাদেশে বিশ্বে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দেশের তালিকায় ভিয়েতনামের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর বড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
পণ্য উপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদর ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে অনেক উচ্চহারে সুদ দিয়ে ঋণ নিতে হয়। আমরা নির্দেশ দিয়েছি এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কিছু কিছু ব্যাংক মেনেছে, কিছু কিছু ব্যাংক মানেনি এখনও। তবে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তাদের যা যা সুযোগ সুবিধা দেয়া সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। কাজেই এটাকে আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে চাই। তাছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ও সহজ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সবকিছু যাতে অটোমেশনের মাধ্যমে হয় সেই পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আমরা বিনিয়োগের কথা বলি। তখন বলি একটা দক্ষ যুব সমাজ আছে। এই যুব সমাজই আমাদের শক্তি। তাদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশে ও বিদেশে কাজে লাগবে। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিলো মোট জিডিপির ২৬ শতাংশ। এখন সেটা ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ। তখন বেসরকারি বিনিয়োগ ছিলো ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই বুঝতে পারেন বেসরকারি খাতকে আমরা কতো সুযোগ-সুবিধা এবং কতো রকমের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার আসলে ব্যবসাবান্ধব সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কিন্তু আমাদের অর্থনীতি পরনিভর্রশীল না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশেই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়।
গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক এক শতাংশ; চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক দুই শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। প্রবৃদ্ধির যখন উচ্চহার হয় আর মূল্যস্ফীতি তার থেকে কম থাকে তখন অর্থনীতির সুফলটা তৃণমূল বা সাধারণ মানষের কাছে পৌঁছায়।
দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০২৩-২৪-এর মধ্যে বর্তমানের ২১ শতাংশ থেকে ১৬/১৭ শতাংশে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ও উৎপাদন এবং আমদানি করে গ্যাসের সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিল্পায়নের জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। কারণ আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি। আমি একটিই অনুরোধ করবো আপনাদের যে, শিল্পাঞ্চল আপনারা গড়ে তুলবেন এবং শিল্পোন্নয়ন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ এ বিষয়টার দিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান