বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানী
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভোজ্য তেল ও চর্বিতে ছিলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। তখন সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রধান ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা ছিলো দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত। বর্তমানে চাহিদার ৯০ ভাগই আমাদানি করে মেটানো হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ ড. আজাহার আলী জানান, দেশে তৈল জাতীয় পণ্য আমদানী বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আগের চেয়ে ৫লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আমাদনী করা তৈল জাতীয় পণ্যের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এবছর আমদানী করা হয় ২২ লাখ ৯ হাজার ২৯০ দশমিক ৭৭৭ মেটিক টন তৈল জাতীয় পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানী হয় ১৭ লাখ ৬ হাজার ৫৮৯ দশমিক ৯৩৫ মেট্রিক টন। এসব তৈল জাতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে; সরিষা, সোয়াবিন, তিল, সূর্যমুখী, কোপড়া, কালিজিরা, সয়াবিন এক্সট্রাকশন ও সূর্যমুখি এক্সট্রাকশন।
বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠানের দিয়ে মালয়েশিয়ান পাম ওয়েল কাউন্সিল (এমপিওসি) বাংলাদেশ এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি বছর আমদানী করা হয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেও বেশি অর্থাৎ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভোজ্য তেল ও ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ আট লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার (এক ডলার সমান ৮৫টাকা হারে) তৈল বীজ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছরে ব্যবহৃত ভোজ্য তেল ও চর্বির বাজার মূল্য পাইকারী দরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। যার খুচরা বাজার দর ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ভোজ্য তেলের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগই যেহেতেু আমদানী নির্ভর। তাই স্থানীয় বাজার পুরোপুরি আন্তজার্তিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তজার্তিক বাজারে মূল্য উঠানামার ফলে স্থানীয় বাজারে ভোজ্য তেল-চর্বির দামেও প্রভাব পড়ে। প্রধানত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেল, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবীন তেল ও সয়াবীন বীজ এবং কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরিষা বা ক্যানোলা বীজ আমদানী হয়ে থাকে।
সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রাচীন কাল থেকে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার বিকল্প হিসেবে বাদাম তেল ও তিল তেল উৎপাদিত হতো। কিন্তু জমি কমে যাওয়ায় অপর্যাপ্ত উৎপাদন ও উচ্চমূল্যের কারণে অধিকাংশ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় এর ব্যবহার বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে ভোজ্য তেল হিসেবে বাদাম ও তিল তেলের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বর্তমানে এই দুই প্রকার তৈল বীজ ¯œাক জাতীয় খাবার তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু ভোজ্য তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় ভোজ্য তেলের উৎপাদন ততটা বাড়েনি এবং পরিনামে ১৯৬০ সালের পর থেকে দেশে সয়াবীন তেলের আমদানী শুরু হয়। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য